পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

史心8 বাল্মীকি ও মহাকবি কালিদাস সরযুর অনস্ত মহিমা কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। বাহুল্যপ্রযুক্ত এখানে উছা উদ্ধৃত হইল না। ঐদিন বেলা অধিক হওয়ায় সাধারণ স্নান ও সন্ধ্যা শেষ করিয়৷ আহারের উদ্যোগে ব্যাপৃত হইলাম । পরদিন (৩রা কাৰ্ত্তিক ) প্রত্যুষে প্ৰাত:কৃত্য সমাপনপূর্বক পুরোহিত সঙ্গে করিয়া স্বৰ্গদ্বারতীর্থে গমন করিলাম । ইহাই অযোধ্যার সৰ্ব্বপ্রধান তীর্থ। পুরাণের মতে কাশী, মথুরা, মায়াপুরী, অবন্তী, কাঞ্চী ও দ্বারকার দ্যায় অযোধ্যা মোক্ষাপ্রদ তীর্থ। কথিত আছে — মহর্ষি দুৰ্ব্বাসার কৌশলে লক্ষ্মণবর্জন শেষ হইলে রঘুকুলপতি ভগবান রামচন্দ্র বন্ধুবান্ধব, অমাত্য ও ভক্ত পুরবাসিগণের সহিত সরযুসলিলে প্রবেশ করেন। যেখানে তাহারা পুণ্যসলিলে অবতরণ করিয়া স্বগে গমন করেন, বাল্মীকির মতে উহার নাম “গোপ্রতর-তীর্থ” । উহাই এখন স্বৰ্গদ্বারতীর্থ নামে আখ্যাত হইয়া থাকে। অযোধ্যাগমনের পুৰ্ব্বে আমার ধারণ ছিল, অযোধ্যা সরযূর দক্ষিণতীরে অবস্থিত এবং সরযু কোনরূপ ক্ষুদ্র তরঙ্গিণ'। কিন্তু এখানে আসিয়া সে ভ্রান্ত সংস্কার বিদূরিত হইল। বস্তুত অযোধ্যা সরযুর দক্ষিণতীরে বিরাজিত এবং সরযু একটি বিপুলকায় বেগবতী নদী । " দক্ষিণতীর হইতে অতিকষ্ট্রে উত্তরতীর দৃষ্টিগোচর হয়। বড় বড় পণ্যবাহিনী নৌকা ইহার স্রোতোবেগে নক্ষত্রবৎ ছুটিতেছে। শত শত নৌকা পাইল তুলিয়া যাইতেছে। শিশুক, নক্র, কুম্ভীর প্রভৃতিরও ভয় না আছে, এমন নহে। বর্ষাকালে এই নদী ঠিক পদ্মানদীর স্তায় প্রচণ্ডমূৰ্ত্তিতে প্রবাহিত হইয়া লোকের মনে ভয় ও বিস্ময় উৎ বঙ্গজশন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, কাৰ্ত্তিক। পাদন করিয়া থাকে। কিন্তু গ্রীষ্মকালে ঐ অবস্থা থাকে না । ইহার প্রবল প্রবাহে কোশলজনপদ বা বর্তমান . অযোধ্যাপ্রদেশ বিলক্ষণ উৰ্ব্বরাশক্তিসম্পন্ন। স্বৰ্গদ্বারতীর্থ ঘাটটি বহুদুর বিস্তৃত এবং প্রস্তরময় সোপানে গ্রথিত । মধ্যে মধ্যে গোলাকার পাষাণময় অদ্ধস্তম্ভাকৃতি স্থান আছে । উহার উপর বসিয়া বেশ সন্ধ্যাপূজা করা যায়। অপরাহ্লে উক্ত বায়ুসেবনের নিমিত্ত ব্যবহৃত হইয়া থাকে। ঘাটটি অনুন সিকিমাইল বিস্তৃত হইবে। এরূপ প্রশস্ত ঘাট কাশী,প্রয়াগ, মথুরা, বৃন্দাবন প্রভৃতি কোথাও দেখা যায় না। একটি সুপণ্ডিত সরযূপারী ব্রাহ্মণকে পুরোহিত স্থির করিয়াছিলাম। ইনি বিশুদ্ধভাবে মন্ত্র উচ্চারণ ও বৈধকার্য্যের প্রক্রিয়াগুলি উত্তমরূপ জানেন। প্রথম বিশেষসঙ্কল্পপূৰ্ব্বক স্বান ও সরযুর অর্ঘ্য অর্পণ করিয়া সন্ধ্যা করিতে বসিলাম। এখানে তুলসী, বিল্বপত্র এবং পুষ্প বিলক্ষণ সুলভ। এক পয়সায় একরাশি সুগন্ধি কুসুম প্রাপ্ত হইলাম। দরিদ্র সধবা ব্ৰাহ্মণমহিলারা পুপচন্দনাদিবিক্রয়ে নিযুক্ত । একটি পয়সার পুষ্প ক্রয় করিলে ইহার এত পরিতুষ্ট হন যে, দেখিলে বিস্মিত হইতে হয়। সন্ধ্যা শেষ হইলেই পাণ্ডার ভূত্য তীর্থশ্রাদ্ধের দ্রব্যাদি লইয়া উপস্থিত হইল। এখানে কচ্ছপের উপদ্রব অত্যন্ত অধিক । জোগাড় করিয়া বসিবার পূৰ্ব্বেই কুৰ্ম্মগণ দলবদ্ধ হইয়া শ্রাদ্ধীয়দ্রব্য আক্রমণ করিবার উদ্যোগ করিল। পাণ্ডার ভূত্য লগুড়হন্তে তাহদের ভুয় দেখাইতে লাগিল। আমি এই অবসরে শ্রাদ্ধ শেষ করিলাম। পুরোহিতটি অতি স্বজন ও যদুচ্ছলাভে সন্তুষ্ট ; দক্ষিণ ও আহাৰ্য্য বলিয়া যাছ