পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8.ΣΦ স্থর মিলাইতেছে না। আমাদের জীবনের সকল দিকেই এম্নিত্তর একটা খাপছাড়া জোড়াতাড়া-ব্যাপার ঘটিতেছে । যুরোপীয় সভ্যতার প্রতাপ ও ঐশ্বর্ষ্যের আয়োজন আমাদের দৃষ্টিকে মুগ্ধ করিয়াছে ; তাহার অসঙ্গত ও ক্ষীণ অনুকরণের দ্বারা আমরা আমাদের আড়ম্বর-আস্ফালনের প্রবৃত্তিকে খুব ড়ে করাইতেছি, আমাদের দেউড়ির কাছে তাহার বড় জয়ঢাকটা কাঠি পিটাইয়া খুবই শক্ষা করিতেছে, কিন্তু যে আমাদের মন্তঃপুরের খবর রাখে, সে জানে, সেখানকার মঙ্গলশঙ্খ এই বাহাড়ম্বরের ধমকে নীরব হইয়া যায় নাই। ভাড়া করা গড়ের বাদ্য একসময় যখন গড়ের মধ্যে ফিরিয়া যায়, তখনো ঘরের এই শঙ্খ আকাশে উৎসবের মঙ্গলধ্বনি ঘোষণা করে। আমরা ইংরেজের রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, বাণিজ্যনীতির উপযোগিতা খুব করিয়া স্বীকার ও প্রচার করিতেছি, কিন্তু তাহাতে কোনোমতেই আমাদের সমস্ত হৃদয়কে পূর্ণভাবে আকর্ষণ করিতেছে না। আমরা সকলের চেয়ে বড় সুর যাহা শুনিয়াছি, এ সুর যে তাহাকে আঘাত করিতেছে—আমাদের অন্তরাত্মা এক জায়গায় ইহাকে কেবলি অস্বীকার করিতেছে। আমরা কোনোদিন এমনতর হাটের মানুষ ছিলাম না। আজ আমরা হাটের মধ্যে বাহির হইয়া, ঠেলাঠেলি ও চীৎকার করিতেছি—ইতর হইয়া উঠিয়াছি, কলহে মাতিয়ছি, পদ ও পদবী লইয়া কাড়াকড়ি করিতেছি, বড় অক্ষরের ও উচ্চকণ্ঠের ৰিজ্ঞাপনের দ্বারা নিজেকে আর পাচজনের চেয়ে অগ্রসর করিয়া ঘোষণা করিবার প্রাণপণ बछच-नि । t৬ষ্ঠ বর্ষ, অগ্রহায়ণ। চেষ্টা চলিতেছে। অথচ ইহা একটা নক। ইহার মধ্যে সত্য অতি অল্পই আছে। ইহার মধ্যে শান্তি নাই, গাম্ভীৰ্য্য নাই, শিষ্টতাশীলতার সংযম নাই, শ্ৰী নাই। এই নকলের যুগ আসিবার পূৰ্ব্বে আমাদের মধ্যে এমন একটা স্বাভাবিক মৰ্য্যাদা ছিল যে, দারিদ্র্যেও আমাদিগকে মানাইত, মোটাভাত-মোটাকাপড়ে আমাদের গৌরব নষ্ট করিতে পারিত না। কর্ণ যেমন তাহার কবচকুগুল লইয় জন্মগ্রহণ , করিয়াছিলেন, তখনকার দিনে আমরা সেইরূপ একটা স্বাভাবিক আভি জাত্যের কবচ লইয়াই জন্মিতাম। সেই কবচেই আমাদিগকে বহুদিনের অধীনতা ও দুঃখদারিদ্র্যের মধ্যেও বঁাচাইয়া রাখিয়াছে— আমাদের সম্মান নষ্ট করিতে পারে নাই। কারণ, আমাদের সে সম্মান বাহিরের আহরণকরা ধন ছিল না, সে আমাদের অন্তরের সামগ্রী ছিল । সেই সহজাত কবচখানি আমাদের কাছ হইতে কে ভুলাইয়া লইল । ইহাতেই আমাদের আত্মরক্ষার উপায় চলিয়৷ গেছে। এখন আমরা বিশ্বের মধ্যে লজ্জিত। এখন আমাদের বেশে-ভূষায়, আয়োজনেউপকরণে একটু কোথাও কিছু খাটাে পড়িয়া গেলেই আমরা আর মাথা তুলিতে পারি না । সম্মান এখন বাহিরের জিনিষ হইয়া পড়িয়াছে, তাই উপাধির জন্ত, খ্যাতির জন্য আমরা বাহিরের দিকে • ছুটিয়াছি, বাহিরের আড়ম্বরকে কেবলি বাড়াইয়। তুলিতেছি, এবং কোথাও একটু কিছু ছিদ্র বাহির হইবার উপক্রম হইলেই তাহাঁকে মিথ্যার তালি দিয়া ঢাকা দিবার চেষ্টা" করিতেছি। কিন্তু ইহার অন্ত কোথায় ? ধে