পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89e বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, পৌষ । , আনন্দের ভিত্তিটাও শক্ত। জ্ঞানের ভিত্তি যদি শক্ত ন হইত,তবে ত সে কেবল খাপছাড়া স্বপ্ন হইত, আর আনন্দের ভিত্তি যদি শক্ত ন হইত, তবে তাহ নিতান্তই পাগলামি মাতলামি ইয়া উঠিত। এই যে শক্ত ভিত্তি, ইহাই সংযম । ইহার মধ্যে বিচার আছে, বল আছে, ত্যাগ আছে, ইহার মধ্যে নিৰ্ম্মম দৃঢ়তা আছে । ইহা দেবতার মত এক হাতে বর দেয়, আর এক হাতে সংহার করে । এই সংযম গড়িবার বেলাও যেমন দঢ়, ভাঙিবার বেলাও তেমনি কঠিন। সৌন্দৰ্য্যকে পূরামাত্রায় ভোগ করিতে গেলে এই সংযমের প্রয়োজন ; নতুবা প্রবৃত্তি অসংযত থাকিলে শিশু ভাতের থালা লষ্টয়া যেমন অন্নব্যঞ্জন কেবল গায়ে মাখিয়া মাটিতে ছড়াইয়া বিপরীত কাণ্ড করিয়া তোলে,অথচ অল্পই তাহার পেটে যায়— ভোগের সামগ্ৰী লইয়া আমাদের সেই দশা হয় ; আমরা কেবল তাহা গায়েই মাথি, লাভ করিতে,পাঁর না । সৌন্দৰ্য্যস্তষ্ট করাও অসংযত কল্পনাবৃত্তির কৰ্ম্ম নহে। সমস্ত ঘরে আগুন লাগাইয়া দিয়া কেহ সন্ধ্যাপ্রদীপ জালায় না । একটতেই আগুন হাতের বাহির হইয়া যায় বলিয়াই ঘর আলো করিতে, আগুনের উপর দখল রাখা চাই। প্রবৃত্তিসম্বন্ধেও সে কথা খাটে। প্রবৃত্তিকে যদি একেবারে পূরামাত্রায় জলিয়৷ উঠিতে দিষ্ট, তবে ‘যে-ীেন্দর্যাকে কেবল রাঙাষ্টয়া তুলিবার জন্য তাঁহার প্রয়োজন, তাহাকে জালাইয়া ছাই করিয়া তবে সে ছাড়ে, ফুলকে তুলিতে গিয়া তাহাকে,ছিড়িয়া ধূলায় 'টাইয়া দেয়। এ কথা সত্য, সংসারে আমাদের ক্ষুধিত প্রবৃত্তি যেখানে পাত পাড়িয়া বসে, তাহার । কাছাকাছি প্রায়ই একটা সৌন্দর্য্যের আয়োজন দেখিতে পাওয়া যায়। ফল যে কেবল আমাদের পেট ভরায়, তাহা নহে, তাহ স্বাদে, গন্ধে, দৃশ্যে সুন্দর। কিছুমাত্র সুন্দর যদি না-ও হইত, তবু আমরা তাহাকে পেটের দায়েই খাইতাম। আমাদের এত বড় একটা গরজ থাকা সত্ত্বেও কেবল পেট ভরাইবার দিক্ হইতে নয়, সৌন্দর্য্যভোগের দিক্ হইতেও যে আমাদিগকে আনন্দ দিতেছে। এটা আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত লাভ । জগতে সৌন্দর্য বলিয়া এই যে আমাদের একটা উপরি পাওনা, ইহা আমাদের মনকে কোনদিকে চালাইতেছে ? ক্ষুধাতৃপ্তির ঝোকটাই, যাহাতে একেশ্বর হইয়া না ওঠে, যাহাতে আমাদের মন হইতে তাহার ফাস একটু আলগা হয়, সৌন্দর্যের সেই চেষ্টা দেখিতে পাই। চণ্ডী ক্ষুধা অগ্নিমূৰ্ত্তি হইয়া বলিতেছে, তোমাকে থাইতেই হইবে, ইহার উপরে আর কোনো কথা নাই। অম্নি সৌন্দর্য্যলক্ষ্মী হাসিমুখে সুধাবর্ষণ করিয়া অত্যুগ্র প্রয়োজনের চোখরাঙানিকে আড়াল করিয়া দিতেছেন, পেটের জালাকে নীচের তলায় রাথিয়া উপরের মহালে আনন্দভোজের মনোহর আয়োজন করিতেছেন। অনিবাৰ্য্য প্রয়োজনের মধ্যে মানুষের একটা অবমাননা আছে, কিন্তু সৌন্দর্য্য নাকি প্রয়োজনের বাড়া, এইজন্ত সে আমাদের অপমান দূর করিয়া দেয়। সৌন্দৰ্য আমাদের ক্ষুধাতৃপ্তির সঙ্গে . সঙ্গেই সৰ্ব্বদা একটা উচ্চতর সুর লাগাইতেছে বলিয়াই, যাহারা একদিন অসংযত বৰ্ব্বর ছিল,