8లిసి মানুষের মুখ আমাদিগকে বেশি টানে, কেন না, মানুষের মুখে শুধু আকৃতির স্বষম নয়, তাহাতে চেতনার দীপ্তি, বুদ্ধির স্ফৰ্ত্তি, হৃদয়ের লাবণ্য আছে, তাহা আমাদের চৈতন্তকে, বুদ্ধিকে, হৃদয়কে দখল করিয়া বসে। তাহা আমাদের আছে শীঘ্ৰ ফুরাইতে চায় না। আবার মানুষের মধ্যে র্যাহারা নরোত্তম, ধরাতলে যাহারা ঈশ্বরের মঙ্গলস্বরূপের প্রকাশ, তাহারা আমাদের মনের এতদুর পয্যন্ত টান । দেন, সেখানে আমরা নিজেরাই ‘নাগাল পাই না । এইজন্ত যে-রাজপুত্র মানুষের দুঃখমোচনের উপায়চিন্তা করিতে রাজ্য ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন, তাহার মনোহারিতা মানুষকে কত কাব্য, কত চিত্ররচনায় লাগাইয়াছে, তাহার সীম নাই । এইখানে সন্দিগ্ধ লোকের বলিবেন,সৌন্দৰ্য্য হইতে যে ধৰ্ম্মনীতির কথা আসিয়া পড়িল । দুটোতে ঘোলাইয়া দিবার দরকার কি ! যাহা ভালে, তাহ ভালে এবং যাহা সুন্দর, তাহ মুন্দর। ভালে আমাদের মনকে একরকম করিয়া টানে, সুন্দর আমাদের মনকে আরএকরকম করিয়া টানে – উভয়ের আকর্ষণপ্রণালীর ভিন্নতা আছে বলিয়াই ভাষায় দুটোকে দুই নাম দিয়া থাকে। যাহা ভালে তাহার প্রয়োজনীয়তু আমাদিগকে মুগ্ধ করে, আর যাহা সুন্দর, তাহ যে কেন মুগ্ধ করে, সে আমরা জানি না।’ - এ সম্বন্ধে আমার বলিৱার একটা কথা এই যে, মঙ্গল আমাদের ভাল কৰুে বলিয়াই যে তাহাকে আমরা ভাল বলি, ইহা বলিলে সবট বলা হয় না। যথার্থ যে মঙ্গল, তাহ আমাদের প্রয়োজনসাধন করে এবঞ্চ'তাহ সুন্দর – বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, পোঁধ। . অর্থাৎ প্রয়োজনসাধনের উৰ্দ্ধেও তাহার একটা অহেতুক আকর্ষণ আছে। নীতিপণ্ডিতেরা জগতের প্রয়োজনের দিক্ হইতে নীতি উপদেশ দিয়া মঙ্গলপ্রচার করিতে চেষ্টা করেন এবং কবির মঙ্গলকে তাহার অনিবচনীয় সৌন্দৰ্য্যমূৰ্ত্তিতে লোকের কাছে প্রকাশ করিয়া থাকেন। বস্তুত মঙ্গল যে সুন্দর, সে আমাদের প্রয়োজনসাধন করে বলিয়া নহে। ভাত আমাদের কাজে লাগে, কাপড় আমাদের কাজে লাগে, ছাতা-জুতা আমাদের কাজে লাগে ; ভাতকাপড় ছাঁতাজুতা আমাদের মনে সৌন্দর্য্যের পুলক সঞ্চার করে না। কিন্তু লক্ষ্মণ রামের সঙ্গে সঙ্গে বনে গেলেন, এই সংবাদে আমাদের মনের মধ্যে বীণার তারে যেন একটা সঙ্গীত বাজাইয়া তোলে। ইহা সুন্দর ভাষাতেই, সুন্দর ছন্দেই, সুন্দর করিয়া সাজাইয়া স্থায়ী করিয়া রাখিবার বিষয়। ছোট ভাই বড় ভাইয়ের সেলা করিলে সমাজের হিত হয় বলিয়া যে এ কথা বলিতেছি, তাহ নহে, ইহা সুন্দর বলিয়াই। কেন সুন্দর ? কারণ, মঙ্গলমাত্রেরই সমস্ত জগতের সঙ্গে একটা গভীরতম সামঞ্জস্ত আছে, সকল মামুষের মনের সঙ্গে তাহার নিগূঢ় মিল আছে। সত্যের সঙ্গে মঙ্গলের সেই পুর্ণসামঞ্জস্ত দেখিতে পাইলেই তাহার সৌন্দৰ্য আর আমাদের অগোচর থাকে না । করুণা সুন্দর, ক্ষমা সুন্দর, প্রেম সুন্দর ;–শতদলপদ্মের সঙ্গে, পূর্ণিমার টাদের সঙ্গে তাহার তুলনা হয় ; শতদলপদ্মের মত, পূর্ণিমার চাদের মত নিজের মধ্যে এবং চারিদিকের জগতের মধ্যে তাহার একটি বিরোধহীন সুষম আছে ;–সে নিখি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৪৬
অবয়ব