পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీస్సి8 ন!—ইহার আর কোনো ফল নাই থাকুক্‌, হৃদয়ের ভক্তিকে বাহিরে স্থান দিয়া তাহাকেই পুরা আশ্রয় দেওয়া হইল। এইরূপে ভক্তি পূজার মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করিয়া নিজেকেই সার্থক করে। বুদ্ধিমানের পুজা স্বদে টাকাখাটানে—ভক্তিমানের পূজা একেবারেই বাজে-খরচ। হৃদর আপনাকে প্রকাশ করিতে গিয়া লোকসানুকে একেবারে গণ্যই করে না । বিশ্বজগতের মধ্যেও "যেখানে আমরা আমাদের হৃদয়ের এই ধৰ্ম্মটি দেখি, সেখানেই আমাদের হৃদয় আপনিই আপনাকে ধরা দিয়! বসে, কোনো কথাটি জিজ্ঞাসা করে না। জগতের মধ্যে এই বেহিসাবী বাজে-খরচের দিকৃটা সৌন্দৰ্য্য। যখন দেখি, ফুল কেবলমাত্র বীজ হইয়া উঠিবার জন্তই তাড় লাগাইতেছে না, নিজের সমস্ত প্রয়োজনকে ছাঁপাইয়া সুন্দর হইয়া ফুটিতেছে ; মেঘ কেবল জল ঝরাইয়া কাজ সারিয়া তাড়াতাড়ি ছুটি লইতেছে না, রহিয়া-বসিয়া বিনা প্রয়োজনে রঙের ছটায় আমাদের চোখ কড়িয়া লইতেছে ; গাছগুল কেবল কাঠি হইয় শীর্ণ কঙালের মত বৃষ্টি ও আলোকের জন্য হাত বাড়াইয়ানাই, সবজ শোভার পুঞ্জ পুঞ্জ ঐশ্বৰ্য্যে দিগধুদের ডালি ভরিয়া দিতেছে ; যখন দেখি,সমুদ্র যে কেবল জলকে মেঘরূপে পৃথিবীর চারিদিকে প্রচার করিয়া দিবার একুটা মস্ত আপিস তাঁহা নহে, সে আপনার তরল নীলিমার অতলস্পর্শ ভয়ের দ্বারা ভীষণ ; এবং পৰ্ব্বত কেবল ধরাতলে নদীর জল ‘জোগাইয়াই ক্ষান্ত নহে; সে যোগনিমগ্ন রুদ্রের মুত ভয়ঙ্কশ্বকে আকাশ জুড়িয়া নিস্তব্ধ করিয়া रुझझश्वमि । ৬ষ্ঠ বর্ষ, মাঘ। রাখিয়াছে ; তখন জগতের মধ্যে আমরা হৃদয়ধৰ্ম্মের পরিচয় পাই। তখন চিরপ্রবীণ বুদ্ধি মাথা নাড়িয়া প্রশ্ন করে, জগৎ জুড়িয়া এত অনাবশুক চেষ্টার বাজে-খরচ কেন ? চিরনবীন হৃদয় বলে, কেবলমাত্র আমাকে ভুলাইবার জন্তই– আর ত কোনো কারণ দেখি না - হৃদয়ই জানে, জগতের মধ্যে একটি হৃদয় কেবলই আপনাকে প্রকাশ করিতেছে। নহিলে স্বষ্টির মধ্যে এত রূপ, এত গান; এত হাবস্তুবে, এত আভাস-ইঙ্গিত, এত সাজসজ্জা কেন ? হৃদয় যে ব্যবসাদারীর কৃপণতায় ভোলে না, সেইজন্যই তাহাকে ভুলাইতে জলে-স্থলে-আকাশে পদে পদে প্রয়োজনকে গোপন করিয়া এত অনাবশ্যক আয়োজন। ,জগৎ যদি রসময় না হইত, তবে আমরা নিতান্তই ছোট হইয়া অপমানিত হইয়া থাকিতাম ; আমাদের হৃদয় কেবলি বলিত, জগতের যজ্ঞে আমারই নিমন্ত্রণ নাই । কিন্তু সমস্ত জগৎ তাহার অসংখ্য কাজের মধ্যেও রসে ভরিয়া উঠিয়া হৃদয়কে এই মধুর কৃথাটি বলিতেছে যে, আমি তোমাকে চাই । নানারকম করিয়া চাই ; হাসিতে চাই, কান্নাতে চাই ; ভয়ে চাই, ভরসায় চাই ; ক্ষোভে চাই, শান্তিতে চাই। এমূনি জগতের মধ্যেও আমরা দুটা ব্যাপার দেখিতেছি—একটা কাজের প্রকাশ, একটা ভাবের প্রকাশ। কিন্তু কাজের ভিতর দিয়া যাহা প্রকাশ হইতেছে, তাহাকে সমগ্র রূপে দেখা ও বোঝা আমাদের কষ্ট নয়। ইহার মধ্যে যে অমেয় জ্ঞানশক্তি আছে, আমাদের জ্ঞান দিয়া তাহার কিনারা পাওয়া যায় না । &