দ্বিতীয় সংখ্যা। J ন, তখন হাস্তমুখে বন্ধুগণকে ধন্যবাদ জানাইল। কেন ? ইহার কারণ, অসহিষ্ণু হইয়া তেজ দেখাইতে যাওয়াই দুৰ্ব্বলত, দেশের মঙ্গলকে শিরোধাৰ্য্য করিয়া স্তব্ধ হইয়া থাকাই যথার্থ বীরত্ব। যদি ইংলণ্ড, ফ্রান্স, জাপানের পক্ষে এ কথু সত্য হয়, যদি তাহার ঔদ্ধত্যপ্রকাশ করিয়া উন্নতির যাত্রাপথে স্বজাতির বোঝা বাড়াইয়া তুলিতে সৰ্ব্বদাই কুষ্ঠিত হয়, তবে আমাদের এই অতি ক্ষুদ্র কৰ্ম্মক্ষেত্রে কেবল কথায়-কথায় সশব্দে তাল ঠুকিয় বেড়ানই কি আমাদের পক্ষে সকলের চেয়ে বড় কাজ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে? যথাসাধ্য মৌন থাকিয়া,— স্তন্ধ থাকিয়া আমাদের চলিবার পথের বিপুলকায় বিঘ্নদৈত্যগুলিকে নিদ্রিত রাখাই কি আমাদের কর্তব্য হইবে ন ? অবশু, কারণ ঘটিলে ক্ষোভ অনুভব না করিয়া থাকা যায় না— কিন্তু অসময়ে অকিঞ্চিৎকরভাবে সেই ক্ষোভের অপব্যয় করা না করা আমাদের আয়ত্তাধীন হওয়া উচিত । একবার দেশের চারিদিকে চাহিয়৷ দেখিবেন, এত দুঃখ এমন নিঃশব্দে বহন করিয়া চলিয়াছে, এরূপ করুণ দৃপ্ত জগতের আর কোথাও নাই । নৈরাপ্ত ও নিরানন্দ, অনশন ও মহামারী এই প্রাচীন ভারতবর্ষের মন্দিরভিত্তির প্রত্যেক গ্রস্থি বিদীর্ণ করিয়া শিকড় বিস্তার করিয়াছে। দুঃখের মত এমন কঠোর র্ত্যি,—এমন নিদারুণ পরীক্ষা আর কি মুছে/ তাহার সঙ্গে খেলা চলে না—তাহাকে #াক দিবার জে কি, তাহার মধ্যে কৃত্রিম কাল্পনিকতার অবকাশমাত্র নাই—মে শুক্রমিত্র সকলকেই শক্ত করিয়া বাজাষ্ট্রয়া’ লয়। এই . দেশব্যাপী ভীষণ দুঃখের সম্বন্ধে আমরা কিরূপ fদশনায়ক। 40 ব্যবহার করিলাম, তাহাতেই আমাদের মনুষ্যত্বের যথার্থ পরিচয়। .এই দুঃখের কৃষ্ণকঠিন নিকষপাথরের উপরে আমাদের দেশানুরাগ যদি উজ্জল রেখাপাত করিয়া না থাকে, তবে আপনার নিশ্চয় জানিবেন, তাহা খাটি সোনা নহে। যাহা খাটি নহে, তাহার মূল্য আপনারা কাহার কাছে প্রত্যাশা করেন ? ইংরেজজাত যে এ সম্বন্ধে জহরী, তাহাকে ফাকি দিবেন কি করিয়া ? আমাদের • দেশহিতৈষণার উদ্যোগ তাহদের কাছে শ্রদ্ধালাভ করিবে কি উপায়ে ? আমরা নিজে দান করিলে তবেই দাবী করিতে পারি। কিন্তু সত্য করিয়া বলুন, কে আমরা কি করিয়াছি ? দেশের দারুণ দুর্যোগের দিনে আমাদের মধ্যে যাহাঁদের সুখের সম্বল আছে, তাছুর মুখেই আছি ; যাহাঁদের অবকাশ আছে, তাহীদের আরামের লেশমাত্র বাঁধাত, হয় নাই ; ত্যাগ যেটুকু করিয়াছি, তাহা উল্লেখযোগ্যই নহে ; কষ্ট যেটুকু সহিয়াছি, . আৰ্ত্তনাদ তাহ অপেক্ষ অনেক.বেশিমাত্রায় করা হইয়াছে। @ ইহার কারণ কি ? ইহার কারণ এই যে, এতকাল পরের দ্বারে আমরা মাথা কুটিয়া মরিবার চর্চা করিয়া আসিয়াছি, স্বদেশসেবার চর্চা করি নাই। দেশের দুঃখ দূর— হয় বিধাতা, নয় গবর্মেন্ট, করিবেন, এই ধারণাকেই আমরা সৰ্ব্ব-উপায়ে প্রশ্রয় দিয়াছি। আমরা যে দলবদ্ধ-প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া নিজে এই কাৰ্য্যে ব্রত্নী হইতে পারি, এ কথা আমরা অকপটভাবে নিজের কাছেও স্বীকুর করি নাই। ইহাতে দেশের লোকের সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের সম্বন্ধ থাকে না, দেশের মুখের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৮
অবয়ব