পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NV বঙ্গদর্শন । [ ৭ম বর্ষ, ফাল্গুন, ১৩১৪ করিয়াছে। দুঃখ দিয়া যাহা না করিয়াছে তাহ তাহার সম্পূর্ণ আপন হয় না। সেইজন্ত ত্যাগের দ্বারা দানের দ্বারা তপস্তার দ্বারা দুঃখের দ্বারাই আমরা আপন ' আত্মাকে গভীররূপে লাভ করি—সুখের দ্বারা আরামের দ্বারা নহে। দুঃখ,ছাড়া আর কোনো উপায়েই আপন শক্তিকে আমরা জানিতে পারি না। এবং আপন শক্তিকে যতই কম করিয়া । জানি আত্মার গৌরবও তত কম করিয়া বুঝি যথার্থ আনন্দও তত অগভীর হইয়া থাকে। রামায়ণে কবি রামকে সীতাকে লক্ষ্মণকে ভরতকে দুঃখেয় দ্বারাই মহিমান্বিত করিয়া তুলিয়াছেন। রামায়ণের কাবারসে মানুষ যে আনন্দের মঙ্গলময় মূৰ্ত্তি দেখিয়াছে দুঃখই তাহাকে ধারণ করিয়া আছে। মহাভারতেও সেইরূপ। মানুষের ইতিহাসে যত বীরত্ব যত মহত্ব সমস্তই দুঃখের আসনে প্রতিষ্ঠিত। মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পাতিব্ৰত্যের মূল্য দুঃখে, বীর্যের মূল্য দুঃখে, পুণ্যের মূল্য দুঃখে। এই মূল্যটুকু ঈশ্বর যদি মানুষের নিকট হইতে হরণ করিয়া লইয়া যান, যদি তাহাকে অবিমিশ্র মুখ ও আরামের মধ্যে ললিত করিয়া রাখেন—তবেই আমাদের অপূর্ণতা যথার্থ লজ্জাকর হয়, তাহার মর্যাদা একেবারে চলিয়া যায়। . তাহ হইলে কিছুকেই আর আপনার অর্জিত বলিতে পারি না—সমস্তই দানের সামগ্ৰী হইয় উঠে। আজ ঈশ্বরের শস্তকে কর্ষণের দুঃখের দ্বারা আমরা আমার দুঃখের দ্বারাআমার করিতেছি, ঈশ্বরের অগ্নিকে ফ্ৰণের দুঃখের দ্বারা আমার করিতেছি। ঈশ্বর আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনের সামগ্রীকেও. সহজে দিয়া আমাদের অসন্মান করেন নাই ; —ঈশ্বরের দানকেও বিশেষরূপে আমাদের করিয়া লইলে তবেই তাঁহাকে পাই নহিলে তাহাকে পাই না। সেই দুঃখ ভুলিয়া লইলে জগৎ সংসারে আমাদের সমস্ত দাবী চলিয়া যায়, আমাদের নিজের কোনো দলিল, থাকে না ;—আমরা কেবল দাতার ঘরে বাস • করি, নিজের ঘরে নহে। কিন্তু তাহাই যথার্থ অভাব—মামুষের পক্ষে দুঃখের অভাবের মত এত বড় অভাব আর কিছু হইতেই পারে না । উপনিষৎ বলিয়াছেন—স তপৃে হতপাত, স তপস্তপ্ত সৰ্ব্বমস্তজত যদিদং কিঞ্চ। তিনি তপ করিলেন, তিনি তপ করিয়া এই যাহা কিছু সমস্ত সৃষ্টি করিলেন । সেই তাহার তপই দুঃখরূপে জগতে বিরাজ করিতেছে। আমরা অস্তরে বাহিরে যাহা কিছু পৃষ্টি করিতে যাই সমস্তই তপ করিয়া করিতে হয়—আমাদের সমস্ত জন্মই বেদনার মধ্য দিয়া, সমস্ত লাভই ত্যাগের পথ বাহিয়া, সমস্ত অমৃতত্বই মৃত্যুর সোপান অতিক্রম করিয়া । ঈশ্বরের সৃষ্টির তপস্তাকে আমরা এমনি কুরিয়াই . বহন করিতেছি। তাহারই তপের তাপ নবনবরূপে ' ' মানুষের অস্তরে নব নব প্রকাশকে উন্মেষিত করিতেছে। সেই তপস্তাই আনন্দের অঙ্গ। সেইজন্য আর একদিক দিয়া বলা হইয়াছে আনন্দান্ধেব খবিমানি ভূতানি জায়স্তে—আনন্দ হইতেই এই ভূত সকল উৎপন্ন হইয়াছে। আনন্দ ব্যতীত স্বষ্টির এতবড় দুঃখকে বহন করিবে কে ! কোম্বেবালুং কং প্রাণ্যাৎ দেষ আকাশ । আনন্দো ন স্তাং ! কৃষক চাষ করিয়া যে ফসল