পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌড়ীয় যুগ >○○ তুল্য চরিত্রবান ছিলেন। কেহ বা সহস্ৰসংখ্যক অনুচর পরিবৃত হইয়া অমাত্যবন্ধুদের সঙ্গে সৌভাগ্যের তুঙ্গ শৃঙ্গে আসীন ছিলেন। যে সকল ব্যক্তির প্রসঙ্গ কবি অপূৰ্ব্ব স্মৃৰ্ত্তি সহকারে বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা পাঠকগণ স্বয়ং পড়িয়া দেখিবেন । কিন্তু আমরা বলিব, কৃত্তিবাসই এই মুখটি বংশের মুকুটমণি ছিলেন; তিনি র্যাহাদের গৌরব কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, তাহারা তাহার উল্লেখের গৌরবে গৌরবান্বিত হইয়াছেন ; তঁাহারা তঁহার অমৃত স্পর্শে অমর হইয়াছেন, নতুবা এই পাঁচ শত বৎসব পরে কে প্তাহাদিগকে চিনিত ? এমন কি যে গৌড়েশ্বরের পঞ্চ গৌড় ব্যাপক অধিকারের কথা উল্লেখ করিয়া কবি রাজকীয় অনুগ্রহে আপনাকে সম্মানিত মনে করিয়াছিলেন, কৃত্তিবাস। তঁহার সভায় পদধূলি দিয়াছিলেন বলিয়া আজ আমরা এত আগ্রহের সহিত সেই রাজা কে ছিলেন, তাহ জানিতে চাহিতেছি ; এবং তিনি যখন কবিকে দান দিতে চাহিলেন, কবি সগৰ্বে তাহ প্ৰত্যাখ্যান করিলেন, সেই সময় পঞ্চগৌড়েশ্বরের মুকুটের সর্বশ্রেষ্ঠ হীরকটি হইতে কবির মস্তকশোভী বাণীপ্রদত্ত নিৰ্ম্মাল্য আমাদের চক্ষে উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিয়াছিল। ধন্য কেদার খাঁ-যিনি কবির শিরে চন্দনের ছড়া ঢালিয়া বাণীর বরপুত্ৰকে অভিনন্দিত করিয়া সত্যই হস্ত পবিত্র কবিয়াছিলেন এবং গৌড়েশ্বর ধন্য, যিনি কবিকে রামায়ণ অনুবাদের ভার দিয়া বঙ্গদেশের শ্রেষ্ঠ হিতসাধন করিয়াছিলেন।” (খ) অনন্ত রামায়ণ । কৃত্তিবাসের পরে র্যাহারা রামায়ণ রচনা করেন তন্মধ্যে ‘অনন্ত রামায়ণ’ খানিই সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন বলিয়া বোধ হয়। শ্ৰীযুক্ত করুণানাথ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় এই পুস্তকখানি সংগ্ৰহ করিয়াছেন ; ইহা বন্ধলে লিখিত, অবস্থা অতি জীর্ণ শীর্ণ, পশ্চাতের কয়েকখানি পত্ৰ নষ্ট হইয়াছে, সুতরাং সময় নিৰ্দ্ধারণের উপায় নাই ; বন্ধলে লিখিত ও “দেখিতে অতি প্রাচীন” ইহাই এই পুস্তকের প্রাচীনত্বের প্রমাণ, ইহা ছাড়া আর একটি বিশেষ প্রমাণ ভাষা। শেষোক্ত বিষয়ে অনুমান বড় নিরাপদ নহে, অন্য প্রমাণাভাবেই গ্রন্থের ভাষার আশ্রয় গ্ৰহণ করিয়া সময় নিরূপণের চেষ্টা দেখিতে হয়, কিন্তু নিতান্ত মফঃস্বলের ভাষা এখনও প্ৰাচীন শব্দ পরম্পরায় এরূপ জটিল রহিয়া গিয়াছে যে, বৰ্ত্তমান সময়েও যদি বঙ্গের কোন সীমান্ত পল্লীর প্রচলিত ভাষা লিখিত আকারে উপস্থিত হয়, তবে অদ্ভুত গবেষণার সাহায্যে আমরা তাহা প্রাকৃতিক যুগে কি বৌদ্ধাধিকারে লইয়া পৌছাইতে পারি। তবে অন্যান্য প্রমাণের অভাব হইলে ভাষা-পরীক্ষা ভিন্ন, সময় নিৰ্দ্ধারণ সম্বন্ধে গত্যন্তর নাই ; অনন্তরামায়ণের ভাষা অত্যন্ত জটিল ও প্রাচীন, ইহা সকলেরই স্বীকার করিতে হইবে, কত প্ৰাচীন সে সম্বন্ধে মতভেদ হইতে পারে, এই পৰ্য্যন্ত ; আমরা ইহা নৃন পক্ষে ৪০ • শত বৎসর পূৰ্ব্বে রচিত ইহঁয়াছিল বলিয়া অনুমান করি। গ্রন্থকারের বাসস্থান কি তৎসংক্রান্ত অন্য কোন বিষয়ের বিবরণই