পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sq 8)S বঙ্গভাষা ও সাহিত্য কীৰ্ত্তনের আসবে দেখিতে পাইবেন, বৈষ্ণবগায়কেরা বিদ্যাপতির পদে কিরূপ অপূৰ্ব ভাবের আখর দিয়া তাহা আধ্যাত্মিক গৌরবে গরীয়াণ করিয়া থাকেন। মহাপ্রভুর কৃপা-কটাক্ষ পাতে বিদ্যাপতির রূপে স্বৰ্গীয়ােচ্ছটার প্রভা পড়িয়াছে। দৃষ্টান্ত স্থলে একটি ভণিতার উল্লেখ করিতে পারি ঃ-“ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বর নারী। সুজনক কুদিন দিবস। দুই চারি।” বাঙ্গালী কুঁীৰ্ত্তনীয়ারা শেষ ছত্ৰে যে আখির দেন, তাহার অর্থ এই :—যোজন কৃষ্ণপদে নিজকে সমর্পণ করিয়াছে— তাহার দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী হইতেই পারেনা। “সুজন” শব্দকে কৃষ্ণভক্তের আসনে আসীন করাইয়া র্তাহারা পদটি ভক্তিরসাত্মক করিয়াছেন, শত শত পদে এই ভাবের আখরা পড়িয়াছে। ৫। সামাজিক ইতিহাস বা কুলজী-সাহিত্য । বিশ্বকোষ-সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয়ের যত্নে বঙ্গীয় বিবিধ সমাজের বহুসংখ্যক কুলজীগ্রন্থ আবিষ্কৃত হইয়াছে। বঙ্গদেশের সামাজিক জীবনের আখ্যায়িকা এই সকল পুস্তকে বিস্তারিতরূপে বিবৃত হইয়াছে। র্যাহারা বঙ্গীয় সমাজের পরিচয় জানিতে ইচ্ছা করেন, তঁহাদের নিকট এই উপকরণরাশি বিশেষরূপে মূল্যবান। বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের অবনতির সময় এদেশে স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যতীচার প্রভৃতি দ্বারা সমাজ একান্তরূপে শিথিল ও উচ্ছঙ্খল হইয়া পড়িয়াছিল। বামাচারী বৌদ্ধ তান্ত্রিকগণ যে সমস্ত অনুষ্ঠানে প্ৰবৃত্ত হইয়াছিল, তাহা নীতি ও ধৰ্ম্মবিধ্বংসী । এই সময় ভৈরবীচক্র প্রভৃতি দ্বারা পুরুষ ও রমণীগণ নৈতিক আদর্শ হইতে একান্তরূপ স্বলিত হইয়াছিলেন। অপর পক্ষে তান্ত্রিকগণের খাদ্যাখাদ্যের কিছুমাত্র বিচার ছিল না। তাহারা গলিত শবের মাংস, মলমূত্ৰাদি পৰ্য্যন্ত কিছুমাত্র দ্বিধা না করিয়া ভক্ষণ করিতেন। বঙ্গদেশের ঘরে ঘরে এই প্রকার তান্ত্রিক দীক্ষা প্রচারিত হইয়া সমাজকে বীভৎস করিয়া তুলিয়াছিল। হিন্দুধৰ্ম্মের পুনরুত্থানে সৰ্ব্ববিষয়ে এতদূরূপ স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্ৰতিক্রিয়া আরম্ভ হইল। ব্যভীচারের সংশোধনাৰ্থ যে সংস্কারকাৰ্য্য আরব্ধ হইল, তাহাতে ‘আচার’ই শ্ৰেষ্ঠস্থান অধিকার করিল। হিন্দুসমাজে এখন খাদ্যাখাদ্যের যে আঁটা আঁটি ও নিত্য-নৈমিত্তিক নিয়মের প্রতি যে একাগ্ৰনিষ্ঠা দৃষ্ট হয়, তাহা বৌদ্ধ-যুগের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিক্রিয়া। এখন আচার অনেকটা প্রাণশূন্য হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এক সময়ে শিথিল সমাজে শৃঙ্খলা-স্থাপন জন্য আচার বিশেষ প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছিল। বিদ্যা, যশঃ ধৰ্ম্ম প্ৰভৃতি সৰ্ববিধ গুণের অগ্ৰে বল্লাল সেন এই আচারের স্থান দিয়াছিলেন। কৌলীন্যের ইহাই প্ৰথম লক্ষণ। লক্ষ্মণ সেনের সময় কৌলীন্য বংশগত হইল। বংশমৰ্য্যাদা অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য কুলীনগণ যেরূপ স্বাৰ্থত্যাগ প্ৰদৰ্শন করিয়াছিলেন, তাহা বীরোচিত। মার্কেণ্ডেয় চণ্ডীর অনুবাদক রূপনারায়ণ ঘোষের পূর্বপুরুষ জগন্নাথ ও বাণীনাথ নামক ভ্রাতৃদ্বয়কে মাণিকগঞ্জের অন্তঃপাতী আমডাল নিবাসী করবংশীয় কোন জমিদার