পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

cોૌ-િજૂન Rළුම් রাজ্যে পা’ দিয়া স্বীয় এলাকা অসম্ভব রূপ বাড়াইয়া ফেলিয়াছেন। কথিত আছে বিদ্যাপতির এক উপাধি ছিল, কবিশেখর, অপর এক উপাধি ছিল। কবিবল্লভ, তিনি কবিদের শ্রেষ্ঠ, সুতরাং কবিভূষণ প্রভৃতি উপাধিও তেঁহারই যোগ্য । কে কখন তঁহাকে এই সকল উপাধি বা ইহাদের কোন একটি দিয়াছিলেন,—তাহার ঠিকানা নাই। সম্পাদকগণ এই সমস্ত বিভিন্ন ভণিতার পদ দু' হাতে কুড়াইয়া তাহাদের সংস্করণ ভৰ্ত্তি করিতে লাগিলেন-ভণিতাহীন বহু পদ তাহারা শুধু তঁহাদের বিমানবিহারী অনুমানের উপর জোর দিয়া বিদ্যাপতির পদান্তবৰ্ত্তী করিয়া লইলেন। এই সকল পদে যদি श्रे একটি পদে ব্রজবুলীর ছিটা ফোটা তাহারা পান, তবে তো কথাই নাই। —তাহা হইলে সোণায়সোহাগা মিলিয়া যায়,-বিদ্যাপতির পদ বলিয়া চালাইতে তঁহাদের আর দ্বিধা মাত্র থাকে না । যেন বঙ্গদেশে কবিবল্লভ, নৃপবল্লভ, কবিশেখর প্রভৃতি উপাধি আর কাহারও ছিল না, ষেন বঙ্গীয় বৈষ্ণব কবিদের মধ্যে বাঙ্গালী কেহ কোন দিন যৈছে, তৈছে, যবিহু, কঁবাহু আর কেহ কোন দিন কেহ লিখেন নাই । এই ভাবে বহু বাঙ্গালীর কবির পদ গ্ৰাস করিয়া বৰ্ত্তমান বিদ্যাপতির সংস্করণগুলি বৃহদাকৃতি ধারণ করিয়াছে। অনেক কবির উৎকৃষ্ট পদগুলি বিদ্যাপতির কাব্যসংগ্রহে স্থান পাইয়াছে। কিন্তু বিদ্যাপতি এত বড় কবি যে র্তাহার এই ধারকরা সৌন্দৰ্য্য পরিবার কোনই দরকার নাই, অথচ বঙ্গের অনেক কবি তঁহাদের শ্রেষ্ঠ পদের ন্যায়সঙ্গত দাবী সম্পাদকগণের খামখেয়ালীতে হারাইয়া ফেলিতেছেন। দৃষ্টান্তস্থলে বলা যাইতে পারে, “জনম অবধি হামু রূপ নেহারিনু-নয়ন না তিরপিত ভেল” পদটি কখনও বিদ্যাপতির নহে, উহা বাঙ্গালী “কবিবল্লভ” নামে কোন কবির। নগেনবাবু আমাকে জানাইয়াছিলেন, উহা মিথিলায় পাওয়া যায় নাই। তথাপি কি ভাবিয়া তিনি উহ্য তঁহার পদসংগ্রহের শেষে স্থান দিয়াছেন, তিনিই জানেন। বহু পদ খাস বাঙ্গলার, বাঙ্গালা ভাষায় লিখিত, অথচ বিদ্যাপতির ভণিতায় চলিতেছে, যথা ‘মরিব মরিব সখি, নিশ্চয় মরিবি, কানু হেন গুণনিধি কারে দিয়া যাব।” বাঙ্গলার পল্লীর আলি গলিতে শত শত গানে এই পদটির ভাব বিদ্যমান থাকিয়া উহা যে বাঙ্গলার নিজস্ব তাহ প্ৰমাণ করিয়া দিতেছে। এই বাজে। পদগুলি বাদ দিয়া একটি খাটি বিদ্যাপতির পদসংগ্ৰহ প্ৰকাশ করিবার প্রয়োজন হইয়াছে। বাঙ্গালীরা বিদ্যাপতির পদগুলিকে বাঙ্গলা ভাষার পরিচ্ছদ পরাইয়া বিদ্যাপতির যে নবকলেবারের স্বষ্টি করিয়াছেন, তাহা আমরা কখনই বাদ দিতে পারি না। বৈষ্ণব মহাজনেরা উহা করাইয়াছেন, উহাকে ভক্তিগঙ্গায় স্নাত করাইয়া বিদ্যাপতিকে তাহারা যে স্বৰ্গীয় জ্যোতিঃ প্রদান করিয়াছেন, তাহা পাণ্ডিত্যের পল্লবগ্রাহিতা দেখাইতে যাইয়া আমরা মূঢ়তা বশতঃ পরিহার করিতে পারি না । W) O