পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(SV) বঙ্গভাষা ও সাহিত্য একান্ত বাহুল্য-বৰ্জিত কলানৈপুণ্যে নাট্য-শ্ৰী পরিশোভিত হইয়াছে। মহুয়া ধোপার পাটের পরে রচিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় এবং ধোপার পাট চণ্ডীদাসের সমকালিক কিম্বা কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্ববস্তু বলিয়া অনুমান হয়-যেহেতু ধোপার পাটের ভাষা ও ভাব চণ্ডীদাসের যুগের বেশী নিকটবৰ্ত্ত ও ঘনিষ্ঠতর সম্বন্ধে আবদ্ধ। প্রথম অধ্যায় পাঠ করিবার সময় আশঙ্কা হয়, বুঝি পল্লীকবি শীলতার সীমা কতকটা অতিক্রম করিলেন। কিন্তু এই কবিগণের নৈতিক আদর্শ এত উচ্চ যে ক্ষিপ্ৰগামী জেলে ডিঙ্গির নাবিকের ক্ষেপণী যেরূপ ডুবন্তপ্রায় নৌকাকে অবলীলাক্রমে মুহূৰ্ত্তে মুহূর্তে রক্ষা করিয়া চলিয়া যায়, এই সকল পল্লীকবিরাও শীলতার বাধ অতিক্ৰম করিতে করিতে যেন অসামান্য সংযমের দ্বারা লেখনীকে সাবধান করিয়া নিৰ্ম্মল রসধারা রক্ষা করিয়া থাকেন । ধোপার পাটের কাঞ্চনমালা আশঙ্কার সহিত-ভয়ের সহিত দুৰ্গম প্ৰেমপথে অগ্রসর হইতেছেন। একদিকে দেখিতে পাই রাজকুমারের নিভীক সংযমহীন উদাম চরিত্র। তিনি রাজার পুত্ৰ, জীবনে র্তাহার কোন ইচ্ছাই বাধা মানে নাই ; তঁাহার প্রবৃত্তিগুলি দুরন্ত বন্য ঘোটকের মত পথ বিপথ না মানিয়া-ভবিষ্যৎ গ্রাহ না করিয়া ছুটিয়াছে—তাহ রাশি মানে নাই, তাহার দুর্নিবারগতি প্রবৃত্তির মুখ বল্প দিয়া ফিরান যায় না। অন্যদিকে ভীরু বালিকার দ্বিধা পূর্ণ পাদক্ষেপ-ভয় শঙ্কিত গতি, শঙ্কা-চকিতদৃষ্টি,—যাহাকে পাওয়া তার পক্ষে শিশুর চাঁদ ধরা অপেক্ষাও অসম্ভব, সেই অসম্ভব সুখ হাতের মুঠোর মধ্যে আপনা-আপনি আসিয়া পড়িয়াছে, তখনও বালিকার বুক দুরু দুরু কঁাপিতেছে। বালিকার, এই সংযত অথচ দুরাশাপূর্ণ প্ৰেম আধ্যাত্মিক নিগুঢ় রসের ভাষায় মাঝে মাঝে অস্পষ্ট ইঙ্গিতে ব্যক্ত হইয়াছে। রাজকুমার ও ধোপার মেয়ে গৃহত্যাগী হইলেন। মন্থরগামিনী, দ্বিধাচিকিত—শরাহতা হরিণীব মত গৃহত্যাগ-দুঃখকাতরা বালিকার নৈশ-পৰ্যটন কি সুন্দর। কি করুণ ! বালিকা বলিতেছেকাল প্ৰাতে সুৰ্য্য উঠিবে, কিন্তু আমাদের পল্পী-তরুরাজির শীর্ষ আলোকিত করিয়া সুৰ্য্যোদয় যেমন দেখিতাম—আর তেমনটি দেখিব না। খোয়াই নদীকে শেষ দেখা দেখিয়া আসিয়াছি। পল্লীর আত্মীয়গণের সঙ্গে শেষ আলাপ করিয়া আসিয়াছি, তাদের সঙ্গে সুখ-সম্পর্কের বাধন চিরতরে ছিড়িয়া আসিয়াছি। পিতামাতার কথা ভাবিতে কতবার কাঞ্চন প্ৰাণাধিক রাজকুমারের স্বৰ্গীয় সঙ্গ লাভ করিয়াও কঁাদিয়া উঠিতেছে। রাজকুমারের খেয়াল বড়লোকের সখের মতই ; সহসা জ্বলিয়া উঠে এবং সহসা নিবিয়া ধৰি । উহা খড়ের আগুনের মত, অতি ঘটা করিয়া প্ৰকাশ পায়—এবং শেষে ছাই হইয়া ধোয়া হইয়া, উড়িয়ী যাইতেও দেরি হয় না। কুক্ষণে কাঞ্চন রুক্মিণীর কাছে নিজ পরিচয় দিয়াছিল-যে কুঁশী’