পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV) বঙ্গভাষা ও সাহিত্য চৈতন্য চরিতামৃত এই জয়ের ভেরী-বাদন উপলক্ষে বৌদ্ধগণের উল্লেখ করিয়াছেন । এই ভাবের অবজ্ঞাসূচক উল্লেখ বৈষ্ণব সাহিত্যের স্থানে স্থানে আরও পাওয়া যায়। বঙ্গদেশ যে এক সময় বৌদ্ধধৰ্ম্মের দ্বারা বিশেষরূপে প্রভাবান্বিত ছিল, তৎপ্রসঙ্গের অবতারণা আমরা নিয়ে করিতেছি। এই বৌদ্ধপ্রভাবের আধিক্য দর্শনে বোধায়ন প্রভৃতি ধৰ্ম্ম সুত্রে একদা বঙ্গদেশে আগমন প্ৰায়শ্চিত্তের বিষয়ীভূত বলিয়া বিধি প্রণয়ন করিয়াছিলেন। এমন কি পালী ও প্রাকৃতের দ্বাবা বিশেষরূপ প্রভাবান্বিত দেখিয়া খৃষ্টীয় ত্ৰয়োদশ শতাব্দীতে কৃষ্ণপণ্ডিত তদীয় ‘প্ৰাকৃতচন্দ্ৰি কায়’ বঙ্গভাষাকে পৈশাচিক প্ৰাকৃতের লক্ষণাক্রোন্ত বলিয়া নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। বৌদ্ধপ্রভাবের আধিক্য নিবন্ধনই এই দেশ এবং এই দেশের ভাষা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপেক্ষণীয় ছিল। কালের কুটিল গতি । যে দেশের সমেত-শেখরে তেইশ জন জৈন তীর্থঙ্কর মোক্ষলাভ করিয়াছিলেন এবং সর্ব প্ৰধান তীর্থঙ্কব মৃত্যুবীর স্বামী যে দেশে অষ্টাদশ বর্ষব্যাপী প্রচারকার্য্যে নিরত ছিলেন, যে দেশের প্ৰিয়পুত্র বৌদ্ধাচাৰ্য্য শান্ত রক্ষিত নালন্দাবিহারের শ্রেষ্ঠতম অধ্যাপকের আসনে প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া সমস্ত বৌদ্ধ জগতে বঙ্গীয় প্রতিভাব অনন্যসাধারণ গৌরব প্ৰতিপন্ন করিয়া গিয়াছেন, সেই দেশ হিন্দুধৰ্ম্মের পুনরুত্থানে বৌদ্ধ এবং জৈন ধৰ্ম্মের প্রতি এতাদৃশ প্রতিকূলতা অবলম্বন করিল যে, তদীয় সাহিত্যে উক্ত ধৰ্ম্মপ্রসঙ্গের জন্য কণিকামাত্র স্থানও ছাড়িয়া দিতে কুষ্ঠিত হইল। বঙ্গদেশে এক সময়ে বৌদ্ধ-ধৰ্ম্ম প্রবল পরাক্রমের সহিত রাজত্ব করিতেছিল । সপ্তম শতাব্দীর প্রারস্তে হিউএনসাঙু মুঙ্গের এবং সমুদ্রের অন্তর্বত্তী প্রদেশ সমূহে ১১৫০০ বৌদ্ধ পুরোহিত দেখিয়া গিয়াছিলেন। উক্ত সংখ্যক পুরোহিতের অনূ্যন এক কোটী শিস্য থাকিবার কথা । এই অসংখ্য লোকবর্গের অবলম্বিত ধৰ্ম্ম চিহ্নমাত্র না রাখিয়া বিলুপ্ত হইয়া গেল, ইহা বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না। পালরাজগণের সময়েও বৌদ্ধধৰ্ম্ম বঙ্গদেশে প্রবল ছিল । মগধের রাজধানী ওদন্তপুরীতে মুসলমানগণ বহুসংখ্যক বৌদ্ধভিক্ষুর প্রাণ সংহার করিয়াছিলেন, উহা খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ঘটিয়াছিল। এই সময়ের পরেও বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের বিলায়োম্মুখ নিদর্শন বঙ্গদেশ হইতে প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। ১৬০৮ খৃ: অব্দে তিব্বত দেশীয় পণ্ডিত বুদ্ধগুপ্তনাথ এতদ্দেশে উক্ত ধৰ্ম্মের কথঞ্চিৎ প্ৰাদুৰ্ভাব দেখিয়াছিলেন । মগধের জনৈক কায়স্থ ১৪৪৬ খৃঃ অব্দে একখানি বৌদ্ধপুথি নকল করিয়াছিলেন ; উহা কেন্বিজ নগরে রক্ষিত আছে। এইরূপ অনেকগুলি বৌদ্ধধৰ্ম্মসংক্রান্ত পুথি বঙ্গদেশীয় লেখকগণ ত্ৰয়োদশ হইতে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে লিখিয়াছিলেন, সেগুলি নানা স্থানে পাওয়া গিয়াছে। চূড়ামণি দাস, গোবিন্দ দাস প্রভৃতি বৈষ্ণব লেখকগণ কৃষ্ণদাস কবিরাজের ন্যায়। বৈষ্ণব-ধৰ্ম্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন-উপলক্ষে প্রসঙ্গক্ৰমে বৌদ্ধগণে বা কথা উল্লেখ করিয়াছেন । সপ্তদশ শতাব্দীতে রামায়ণ প্ৰণেতা বঙ্গীয় কবি किरु ऐंशीव्र ९४९ं वरिष्टुङ्गा, ধৰ্ম্মপূজা।