পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*罗门 মনে যে অন্ধকার-ভীতির ক্রীড়া হইতে ছিল, সেই ভীতি ভাব কিয়ৎপরিমাণে হ্রাস হইল ; বিপদের কারণ তিনি জানিতে পারিলেন। ঠাকুরকে তিনি আর তখন । বেশী কথা জিজ্ঞাসা করিলেন না, বেলা হইল, মানাহার সমাপন করিয়া জীবনবন্ধু চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া কাশীরাম দাসের মহাভারতের দ্ৰোণপৰ্ব্ব পাঠ করিতে । লাগিলেন ; আপন ভাগ্যের সহিত মিলন করিবার অভিলাযে অভিমানু্য-বধের অংশটী পাঠ করিতে তিনি সমুৎসুক হইলেন। দিন দিন দিন গত হইতে লাগিল, দেখিতে দেখিতে একপক্ষ অতীত হইয়া । গেল ; হারাণ ঠাকুর নিত্য নিত্য জীবনবন্ধুকে নানাপ্রকার প্রবােধ দেন, তাহার অবস্থার ন্যায় নানাপ্রকার দৃষ্টান্ত বলেন, জীবনবন্ধু কতক কতক আশ্বস্ত হন। পক্ষান্তে হারাণ ঠাকুরকে তিনি বলিলেন, “আপনার আজ্ঞা আমি পালন করিলাম, একপক্ষ গত হইল, এখন আমি বিদায় প্রার্থনা করি।” হারাণ ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় যাইবার অভিলাষ ?” জীবনবন্ধু উত্তর করিলেন, “এখন আমি তীর্থযাত্রায় অভিলাষী।” মানুষের মনে যে প্রকার অভিলাষ জাগে, প্রকাশ করিবার ইচ্ছা না থাকিলেও, আপন হইতে তাহ প্ৰকাশ হইয়া পড়ে। হারাণ ঠাকুর সন্তোষপ্ৰকাশ করিয়া বুলিলেন, “উত্তম অভিলাষ ; আপাততঃ কিছুদিন তীৰ্থবাস করাই আপনার পক্ষে শ্ৰেয় ; অনেক পরিমাণে শান্তি প্ৰাপ্ত হইবেন ।” এই পৰ্য্যন্ত বলিয়া একটু চিন্তা। করিয়া পুনরায় তিনি বললেন, “দেখুন, যেখানেই যাইবেন, যেখানেই থাকিবেন, সাবধানত পরিত্যাগ করিবেন না ; অপরিচিত লোকের সঙ্গে অধিক কথা । কহিবেন না ; যে অবস্থা এখুন দাড়াইয়াছে, সে অবস্থার বিষয় কাহারও নিকট প্ৰকাশ করিবেন না ; যদি কোথাও কোন আত্মীয়লোকের সঙ্গে দেখা হয়, তাহার কাছেও মনের কথা বলিবেন না। আর দেখুন, যে সাংঘাতিক কল্পনা দুইবার আপনার মনে উদয় হইয়াছিল, সে কল্পনা বিশ্বত হইয়া থাকিবেন; ভগবানদত্ত জীবন মহামূল্য, সে জীবন আপনি বাহির করিবার ইচ্ছা করবেন না ; আত্মহত্যা মহাপাপ, ইহা যেন সৰ্ব্বদা স্মরণ থাকে। বিপদ ঘটিয়াছে, কোন কারণ। নাই, অথচ বিপদ আসিয়াছে;-সংসারে অনেকের ভাগ্যেই এইরূপ হয়; বিপদে অবসন্ন হইতে নাই, অনুসন্ন হইবেন না, মনে লৰ্ব্বদা ক্ষর্কি রাখিবেন; বিপদ আপনাকে শীঘ্ৰ পরিভাগ করিয়া যাইবে ; ভগবান আপনাকে রক্ষা করিবেন।” । ।