পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম তরঙ্গ । sts স্ত্রীলোকের অহঙ্কার কমে, হিংসা কমে, স্বার্থপরতা কমে এবং দুষ্পবৃত্তও কমিয়া আইসে। এখনকার দিনে সেরূপ সংস্কারের বৈপরীত্য লক্ষিত হইতেছে। বাড়ীতে বৃদ্ধ। শাশুড়ী আছেন, বিধবা ননদিনী আছেন, সধবা ননদিনীর একুটী পুত্র আছে, - তাহাদিগকে সংসার হইতে তাড়াইবার চেষ্টায় নবরঙ্গিণী নিত্য নিত্য স্বামীর কাণে বিষমন্ত্র ঝাড়িতে আরম্ভ করিলেন। তারাপদ ঠিক যেন রঙ্গিণীর মন্ত্রশিষ্য,- সকল বিষয়েই যেন মন্ত্ৰমুগ্ধ ৷ মনে মনে এক একবার ऊँशद्ध श्छ। হইত, বৃদ্ধ৷ জননীকে বাড়ীতে রাখিয়া বিধবা ভগিনীকে আর সেই একাদশবৰ্ষীয় বালকটীকে দূর করিয়া দিবেন, কিন্তু রঙ্গিণীকে সে ইচ্ছা জানাইতে পারিতেন না। নিত্য নিত্য মন্ত্রণা দিয়া, ফল না দেখিয়া, এক রাত্রে রঙ্গিণী রে যান্বিত হইয়া, স্বামীকে বলিলেন, “তোমার সংসার লইয়া তুমি থাক, আমার যেখানে ইচ্ছা, আমি সেখানে চলিয়া যাই । আগাছা পুষিতে তোমায় যখন এত সাধ, তখন আর আমি এ সংসারে থাকিয়া কি করিব ? আমাকে বিদায় করিয়া দাও। দশজনকে পুষিতে সমস্ত ফুরাইয়া যায়, আমার কি কোন সাধ-আহলাদ নাই ? একটা ভাল পোষাক কি এক জোড়া জুতা, কি দুখান৷ গহনা পরিতে কি আমার সাধ হয় না ? বারভূতের জ্বালায় কিছুই হইবার উপায় নাই। তুমি কেবল ভূত পুষিয়া রাখ, আমি । বিদায় হই, ভূতের সংসারে আর মঙ্গল নাই।” অনেক সাধ্য-সাধনা করিয়া তারাপদ বলিলেন, “অনেক দিন হইতে তোমার কথা আমি বুঝিয়াছি, যাহা করিতে হইবে, তাহাও স্থির করিয়া রাখিয়াছি। ভগিনীকে আর সেই ছোকরাকে বিদায় করিয়া দিব, মাকে কিন্তু বিদায় করিতে পারব না । বৃদ্ধ হইয়াছেন, কোথায় যাইবেন ?” । নাসিক কুঞ্চিত করিয়া রঙ্গিণী বলিলেন, “কোথায় যাইবে, আমি তাৱ কি জানি ? আমি সুখের পায়রা, যেখানে সুখ পাইব, সেইখনেই আমি উড়িয়া যাই ; আমাকে তুমি ধরিয়া রাখিতে পারিবে না ।” চিন্তা করিয়া তারাপদ বলিলেন, “একটু স্থির হইয়া বিবেচনা করা। তোমার উপকারের জন্য মাকে আমি রাখিতে চাই। তুমি রন্ধন করিতে জান না, জল । গরম করতে জান না, সংসারের কাজকৰ্ম্ম কিছুই শিক্ষা করা নাই, মাকে, বিদায় বরিয়া দিলে রন্ধন করিবে কে ? তোমার জন্য চা প্রস্তুত করিয়া দিবে কে ? কাজকৰ্ম্ম দেখিবে কে ?”