পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তবতারণের ইচ্ছা ফলবতী হইল না বটে, কিন্তু জীবনবন্ধুর অস্বীকারে তিনি অসন্তুষ্ট হইলেন না, পূৰ্ব্বাপেক্ষা বরং ভঁাহার প্রতি র্তাহার শ্রদ্ধাবৃদ্ধি হইল। অধ্যয়নকাল ব্যতীত অবকাশকালে জীবনবাবু প্ৰায় সৰ্ব্বক্ষণ ভবতারণের নিকটে নিকটে থাকিতেন, দুই ঘণ্টা ইংরাজী পড়াইতেন, প্রসঙ্গ উপস্থিত হইলে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ইতিহাসের গল্প বলিতেন, প্রয়োজন হইলে বিষয়কৰ্ম্মের পরামর্শও চলিত। এই প্রকারে দিন দিন ভৰতারণের সংসারে জীবনবন্ধুর বিলক্ষণ প্ৰতিপত্তিলাভ হইল। ভবতারণ নিজে সকল বিষয়ে সচ্চরিত্র ছিলেন না। তঁহার একটি উপসৰ্গ ছিল। জীবন বাবু প্ৰথম প্রথম তাহ:জানিতে পারেন নাই, শেষে জানিয়াছিলেন ; কিন্তু একদিনও কাহারও নিকটে সে কথা উত্থাপন করেন নাই। রাত্রিকালে তবতারণ বাবু কখন বাহির হইয়া যাইতেন, কখন ফিরিয়া আসিয়া আপন শয্যায় শয়ন করিতেন, জীবন বাবু তাহা জানিতে পারিতেন না। প্ৰতিদিন প্ৰাতঃকালে বাবুকে নিজশয্যায় দেখিতে পাইতেন ; বাবুর মনেও কোন প্ৰকার সন্দেহ स्रन्मिङ ना ! ভবতরণের তিনজন মোসাহেব ছিল । তাহদের মধ্যে একজন অত্যন্ত প্ৰিয়পাত্র, সে ব্যক্তির নাম জটাধারী সরকার। লোকটা গণ্ডমূর্ণ, কাণ্ডাকাণ্ড-জ্ঞান ছিল না ; অত্যন্ত গোয়ার, দেখিতেও কদাকার। আকারের সহিত ভবতারণের কোন সম্বন্ধ ছিল না, কাৰ্য্য লইয়াই কথা । জটাধারীর দ্বারা তঁহার গুপ্তকাৰ্য্যের সবিশেষ সহায়তা হইত। রাত্রিকালে ভবতারণ যেখানে যাইতেন, জটাধারী সরকার সেখানকারও সরকার ছিলেন। সেখানকার সমস্ত কাৰ্য্য জগধারী সৰ্ব্বদা সন্তোষের সহিত নির্বাহ করিয়া দিত। আড়তের হিসাব, মুদ্দীর হিসাব, স্বর্ণকারের হিসাব, বিচালীওয়ালার হিসাব সমস্তই জটাধরীর হস্তে নান্ত ছিল। তাহাতে তাহার বেশ দশ টাকা উপরি-লান্ত হইত। তাহা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জটাধারী মধ্যে মধ্যে এক একটা কুৎসিত কাৰ্য্যে প্রলোভন দেখাইরা বাবুর সন্তোষ উৎপাদন করিত ; বাবুও তাহার পরামর্শমতে কতক কতক কাৰ্য্য করিতেন। মোসাহেব লোকেরা সৰ্ব্বদা বাবুলোকের কাছে কাছে থাকিতে ভালবাসে ; গদীর উপর জানু রাখিয়া, তাকিয়ার একাধারে কণুই রাখিয়া, বাবুর কাণে কাণে কথা কহে। সেই ধরণের মোসাহেব ঐ জটাধারী সরকার ।