পদাবলী—বিদ্যাপতি—১৪-১৫শ শতাব্দী। যেই অধরে সদা মধুরিম-হাস । সোই নীরস ভেল দীঘ-নিশাস ॥ বিদ্যাপতি ভণে মিথ নহ ভাখি (১)। গোবিন্দ দাস কহু তুহু তহি সাখী ॥ (২) অভিসার । জিনি করিবর রাজহংস-গতি-গামিনী চললিহ সঙ্কেত-গেহা । অমল-তড়িত-দণ্ড হেম-মঞ্জরী জিনি অতি সুন্দর দেহ ॥ জলধর চামর তিমির জিনি কুন্তল অলকা ভৃঙ্গ শৈবালে। (৩) ভৌহ মদন-ধনু ভ্রমর ভুজঙ্গিনী জিনি আধ বিধুবর ভালে ৷ নলিনী চকোর শফর সব মধুকর মৃগী খঞ্জন জিনি আখি। নাসা তিল-ফুল গরুড়-চঞ্চু জিনি গিধিনী শ্রবণে বিসেখী (৪) ॥ কনক-মুকুর শশী কমল জিনিয়া মুখ জিনি বিম্ব অধর পবারে (৫)। দশন মুকুতা-পাতি কুন্দ করগ-বীজ (৬) জিনি কম্বু-কণ্ঠ আকারে ॥ বেল তাল যুগ কনয় (৭) কলস গিরি কটোরি জিনিয়া কুচ সাজা। বাহু মৃণাল-পাশ বল্লর জিনি সিংহ ডমরু জিনি মাঝ ॥ উরু-যুগ কদলী করিবর-কর জিনি থল-পঙ্কজ জিনি পদ পাণি। নখ দাড়িম-বীজ ইন্দু রতন জিনি পিক অমিয় জিনি বাণী ॥ ভণই বিদ্যাপতি শুনহ মধুর-মতি রাধারূপ অপারা। রাজা শিবসিংহ রূপনারায়ণ একাদশ অবতার ॥ (৮) (১) ভাখি=ভাষি = বলি। মিথ্যা বলিতেছি না। (২) বিদ্যাপতির অনেক ভণিতা লইয়া গোবিন্দ দাস এই ভাবে স্বীয় কবিত্বের পরিচয় দিয়াছেন। রাধামোহন আচাৰ্য্য-কৃত পদসমুদ্রের সংস্কৃত টীকায়, গোবিন্দদাসের এই ভাবের ভণিতা দেওয়ার কথা উল্লিখিত আছে। বিদ্যাপতির শেষ চরণ পরিবর্তন করিয়া গোবিন্দ দাস এইরূপ করিয়াছেন। এখানে পদের অর্থ এই—বিদ্যাপতি বলিতেছেন, ইহা মিথ্যা কথা নহে; গোবিন্দ দাস বলিতেছেন, তুমিই তাহার সাক্ষী। (৩) এক একটা অঙ্গের বহু উপমা দেওয়া হইয়াছে। কেশের সঙ্গে মেঘ, চামর, অন্ধকার প্রভৃতি উপমিত হইয়াছে। (৪) বিশেষ করিয়া, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ। (৫) প্রবাল । (৬) দাড়িম্ব-বীজ। (৭) কনক । (৮) শিবসিংহকে কবি হরির একাদশ অবতার বলিয়া উল্লেখ করিতেছেন। বিদ্যাপতি-কৃত ‘পুরুষ পরীক্ষায় উল্লিখিত আছে, রাজা শিবসিংহ কৃষ্ণবর্ণ ছিলেন; সেখানেও তিনি এই জন্ত কৃষ্ণের সঙ্গে উপমিত ३३ :ु म ।
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫
অবয়ব