পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিত্তরঞ্জন দাশ ኪም\5ል বলিয়াছিলেন তাহই তােহ্যর প্রধান কথা ; তঁহার রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, সমস্তই ঐ কয়েকটি কথার মধ্যে নিবদ্ধ। নিজে তিনি বলিয়ছিলেন, “দেশের কাজ আমার ধর্মের অঙ্গীভূত। দেশসেবা। আমার জীবনের সকল আদর্শের একটা অংশ। আমার দেশই আমার ঈশ্বর। দেশের কাজ, জাতির কাজই আমার কাছে মনুষ্যত্ব। নরনারায়ণের সেবাই আমার ভগবানের সেবা।” বাংলা সাহিত্যও চিত্তরঞ্জনের নিকট কম ঋণী নহে। ১৮৯৪ কি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে “মালঞ্চ” নামক একখানি গীতিকাব্য লইয়া তিনি সর্বপ্রথম সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। ‘মালঞ্চের” কবি যেমন তেজস্বী, তাহার কবিতাগুলিও তদুপ প্ৰাণময়। তাহার পর ‘মালা’,২ ‘অন্তৰ্য্যামী’, ‘কিশোর-কিশোরী’ ও ‘সাগরসঙ্গীত’ নামে তাহার চারিখানি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি কিছুদিন “নারায়ণ” নামক একখানি মাসিকপত্র সম্পাদন করেন। বঁকিপুরে বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনের ৭ যে অধিবেশন হয়, তাহাতে চিত্তরঞ্জন সাহিত্যশাখার সভাপতিরূপে যে অভিভাষণ পাঠ করেন, তাহাতে তাহার বৈষ্ণব-সাহিত্য সম্বন্ধে গভীর অন্তদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করিলেও হিন্দুধর্মের প্রতি র্তাহার প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল ; পরিণত বয়সে তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি অত্যধিক আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। তঁহার ধর্মমত অতি উদার ছিল। তিনি সর্বদাই বলিতেন, “নরনারায়ণের সেবাই একমাত্র ধর্ম।” যথাসর্বস্ব ত্যাগ করিয়া চিত্তরঞ্জন সত্য সত্যই পথের ফকির হইলেন; দেশের সেবার জন্য তিনি মনপ্ৰাণ সমৰ্পণ করিলেন। একবার প্রচলিত আইন লঙঘনের জন্য তঁহাকে ছয়মাসের জন্য কারাদণ্ড পর্যন্ত ভোগ করিতে হইয়াছিল। ক্ৰমে অত্যধিক পরিশ্রমে আঁহার শরীর ভাঙিয়া পড়িল। যিনি আজীবন সুখের ও বিলাসের ক্রেগড়ে পালিত ও বর্ধিত হইয়াছিলেন, সহসা তঁহার এই সম্পূর্ণ পরিবর্তন শরীরে সহিল না। চিত্তরঞ্জন অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। তবুও তিনি দেশসেবা ছাড়িলেন না। অবশেষে দেশবাসীর সকাতর অনুরোধে চিত্তরঞ্জন স্বাস্থ্য লাভের জন্য দাৰ্জিলিং গমন করিলেন। সেইখানে হঠাৎ একদিন হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন পরলোকগত হইলেন। ১৩৩২ সালের ২ আষাঢ় এই দুর্ঘটনা ঘটিল। তাহার দুইদিন পরে চিত্তরঞ্জনের শবদেহ যেদিন কলিকাতায় আনীত হয়, সেদিন সেই দেবদেহ দর্শন করিবার জন্য কলিকাতায় এমন জনতা হইয়াছিল, যাহার তুলনা হয় না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্তরঞ্জনের পরলোক গমনের সংবাদ পাইয়া যে চারি পঙক্তি কবিতা লিখিয়াছিলেন, তাহাতেই চিত্তরঞ্জনের জীবনব্যাপী সাধনার কথা অতি সুন্দর ভাবে অভিব্যক্ত হইয়াছে। সেই কবিতাটি উদ্ধৃত করিয়া দিয়াই দেশবন্ধুর অসাধারণ জীবনকাহিনি শেষ করিলাম। রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন