পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tr S. বঙ্গ-গৌরব প্রত্যাবর্তন করে নাই ; তঁহার দ্বার দীনদরিদ্রের জন্য অহৰ্নিশ মুক্ত ছিল। দরিদ্রের বন্ধু চিত্তরঞ্জন দেশসেবা ও দরিদ্রনারায়ণের সেবাই একমাত্র কার্য বলিয়া বুঝিয়াছিলেন। সেই জন্যই কৃতজ্ঞ ভারতবাসী তাঁহাকে 'দেশবন্ধু’ নামে অভিহিত করিয়াছিল। ভারতবর্ষের কল্যাণের সমরে দেশবন্ধুর পাঞ্চজন্য দেশবাসীকে কেবল আহ্বানই করে নাই, জাগরণের অপূর্ব উন্মাদনায় তাহাদিগকে উদ্ধৃদ্ধ করিয়া তুলিয়াছিল। দেশাত্মবোধ ছিল চিত্তরঞ্জনের চিত্তের সহজ স্বাভাবিক ধর্ম। তাই, দেশের আহ্বান কানে আসিয়া পৌঁছিতেই ঘর ছাড়িয়া তিনি পথের মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইতে দ্বিধা করেন নাই। নিষ্ঠার দ্বারা বাধাকে, ত্যাগের দ্বারা ভোগকে তিনি জয় করিয়াছিলেন। তঁহার সর্বস্ব ত্যাগের গৌরব দেশের ইতিহাসে নূতন অধ্যায়ের সৃষ্টি করিয়াছে। সেই কতকাল পূর্বে একদিন নরনারীর মুক্তির পথ খুঁজিবার জন্য এক রাজপুত্র সর্বস্ব ত্যাগ করিয়া পথে দাঁড়াইয়াছিলেন; আজও সেই মহাপুরুষ সিদ্ধার্থের অবদান সমগ্ৰ বিশ্বের সসন্ত্রম প্ৰণতি লাভ করিতেছে। ত্যাগ সেই অতীতের পবিত্ৰ স্মৃতিই পুনরাবৃত্তি করিতেছে। বিশ্ববাসী এই সর্বস্বত্যাগী, বিজয়ী বীরকে সসম্রামে, ভক্তি-নম্রশিরে অভিবাদন করিতেছে। পুরাকালে ভগীরথের সাধনা ভস্মস্তপের ভিতর হইতে সগরবংশের উদ্ধারের পথ আবিষ্কার করিয়াছিল; আর বর্তমান কালে দেশবন্ধুর সাধনা জড়, নিম্পন্দ জাতির ভিতর হইতে মাতৃপূজার সর্বাপেক্ষা শক্তিমান ঋত্বিক দলের সৃষ্টি করিয়াছে। বাঙালির বৈশিষ্ট্য বিদেশি কু-শিক্ষার মোহ ভেদ করিয়া পুরাতনের সহিত চিত্তরঞ্জনের নিবিড় সংযোগ-সাধন করিয়াছিল। তাই ঐশ্বর্যের মোহ এই ত্যাগের অবতারকে একটুমাত্রও বিচলিত করিতে পারে নাই ; তাই, ত্যাগের প্রয়োজনের সময় ঐশ্বর্যের নাগপাশ জীৰ্ণ বস্ত্রখণ্ডের মত র্তাহার মনের চারিপার্শ্ব হইতে খসিয়া পড়িয়াছিল। তঁহার যাহা কিছু ছিল সমস্ত দান করিয়া ভোলানাথের মত তিনি ভিক্ষার বুলি স্কন্ধে তুলিয়া লইয়াছিলেন। সে ভিক্ষাও নিজের উদরান্ন সংগ্রহের জন্য নহে ; দেশের দীনদরিদ্র, অনাথআতুর, ক্ষুধার্তা নরনারীর জন্য; লাঞ্ছিত, অবজ্ঞাত, ঘূণিত, বিড়ম্বিত অসংখ্য নরনারীর জন্য। চিত্তরঞ্জনের রাজনীতি, ধর্মনীতি সমস্তই এই অবদানে মহীয়ান হইয়া উঠিয়াছিল। চিত্তরঞ্জনের স্বদেশগ্ৰীতি মহান ও উদার ছিল। তাহার মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা, কোনো বিদ্বেষের ভাব ছিল না। দেশের যাহাতে সর্ববিধ কল্যাণ হয়, তাহারই জন্য তিনি মনপ্ৰাণ সমৰ্পণ করিয়াছিলেন। তিনি স্পষ্ট বাক্যে কতবার কতস্থানে বলিয়াছেন যে, বিপ্লববাদ বা গুপ্ত ষড়যন্ত্রের দ্বারা কখনো দেশের কল্যাণ সাধিত হইবে না, যতদিন ভারতবাসী ধর্ম ও নীতিবলে বলীয়ান না হইতেছে, ততদিন এ দেশ স্বরাজ্য লাভের উপযুক্ত হইবে না। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ময়মনসিংহে একটি বক্তৃতায় চিত্তরঞ্জন যে কথা