পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রাসবিহারী ঘোষ
৯৯

সহ এম. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাহার পর বৎসরই আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া সুবর্ণপদক প্রাপ্ত হন।

 প্রতিভা যাঁহাকে আশ্রয় করে, কার্যকুশলতা তাঁহার শতমুখী হয় ইহা স্বতঃসিদ্ধ। যুবক রাসবিহারী সবেমাত্র হাইকোর্টে প্রবেশ করিয়াছেন, মক্কেলকুল তখনও তাঁহার বক্তৃতার মধু-চক্রে আকৃষ্ট হয় নাই অথবা আইনের কূট তর্কজালে আবদ্ধ ও হয় নাই, সুতরাং পসার প্রতিপত্তি তখনও বহুদুরে। এমনি সময়ে তদানীত্তন প্রধান বিচারপতি বিখ্যাত স্যার বার্নস্ পিককের’ এজলাসে বিনা পয়সায় যুবক রাসবিহারী একটা মোকদ্দমা চালাইবার ভার প্রাপ্ত হন। তাঁহার সওয়াল জবাবের পর প্রতিপক্ষীয় উকিল সওয়াল জবাব করিতে উদ্যত হইলে, স্যার বার্নস্ পিকক রাসবিহারীর প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া প্রশ্ন করেন যে, এই যুবকের এমন সুন্দর ভূমিকা ও অত্যুৎকৃষ্ট সওয়াল জবাবের পর তাঁহার আর কিছু বলিবার আছে কি? ইহাতে হাইকোর্টময় একটা হুলুস্থুল পড়িয়া যায়। সময়সাপেক্ষ হইলেও রাসবিহারীর ভবিষ্যৎ অর্গলমুক্ত হয়। ইহাই রাসবিহারীর প্রথম জীবনের উন্নতির আভাস।

 ভারতের নব জাগরণের যুগে ঘুমন্ত জাতির নিদ্রাভঙ্গের সূচনায় যে কয়জন পুরুষসিংহ ভারতের ভাগ্য-নিয়ন্ত্রণে অগ্রসর হন, রাসবিহারী তাঁহাদেরই অন্যতম। বাংলার জ্যোতিষ্কমণ্ডলের তিনি এক অত্যুজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। অগণিত প্রাণের মধ্যে তিনি এক মহাপ্রাণ। জাতির প্রাণের গান তাঁহার অন্তরের তন্ত্রীতে ধ্বনিত হইয়াছিল, তাই দেখা যায় তাঁহার সমগ্র জীবন একটা কঠোর সাধনা।

 স্থির, গম্ভীর, অকুতোভয়, কর্তব্যনিষ্ঠ রাসবিহারী কাহারও ভ্রুকুটি, লোকনিন্দা বা বিরুদ্ধবাদীগণের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ প্রভৃতিতে সর্বদাই অবিচলিত ছিলেন। আইন-অধ্যাপনায়, আইন-প্রণয়নে বা আইন-ব্যবসায়ে কিংবা শিক্ষা-বিস্তারে, রাজনীতি-ক্ষেত্রে জাতির হিতসাধনে ও প্রকৃত বদান্যতায় ধীরপ্রতিজ্ঞ রাসবিহারী ইতিহাসে অতুলনীয়।

 অথচ স্যার রাসবিহারী মধ্যবিত্ত গৃহস্থের সম্ভান ছিলেন। সুবৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ গ্রামের ঘোষ পরিবারে ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর তাঁহার জন্ম হয়। তাঁহার পিতা স্বর্গত জগদ্বন্ধু ঘোষ এবং পিতামহ স্বর্গত পীতাম্বর ঘোষ। পিতামহীর নিকট তিনি অধিকতর আদর পাইতেন। কোন এক ঘটনায় পিতামহী পরিবারবর্গের উপর অসন্তুষ্ট হইয়া রাসবিহারীকে লইয়া তাঁহার পিত্রালয় তোড়কনা গ্রামে চলিয়া যান। কাজেই গ্রামের পাঠশালায় অধ্যয়ন তাঁহার অধিক দূর অগ্রসর হয় নাই। কয়েকমাস পিতামহীর নিকট থাকিবার পর তাঁহার পিতা তাঁহাকে বর্ধমানে লইয়া গিয়া রাজ কলেজ স্কুলে ভরতি করিয়া দেন। এই সময় হইতে তাঁহার প্রতিভার বিকাশ হইতে থাকে। তিনি প্রায়ই সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করিতে থাকেন।

 তাঁহার পিতা পুলিশ কর্মচারী ছিলেন ও বদলি উপলক্ষে ইনস্পেকটার হইয়া বাঁকুড়ায় গমন করিলে রাসবিহারী তত্রত্য উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভরতি হন। তাঁহার দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়ন কালে দেখা যায় সেবার প্রথমশ্রেণি হইতে প্রবেশিক্ষা পরীক্ষার্থী তেমন কেহ ছিল না। স্কুল কর্তৃপক্ষ রাসবিহারীর অসাধারণ মেধার পরিচয় পাইয়া তাঁহাকেই