পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R বঙ্গ-গৌরব আপনি চিন্তা ত্যাগ করুন, আমি ভট্টাচার্য মহাশয়ের কন্যাকে বিবাহ করিব।” শ্যাম ভট্টাচার্যের এই কন্যা তারিণী দেবীই রামমোহনের জননী। রামমোহনের শৈশব জীবনের সঙ্গেও অনেক রকমের গল্প আছে। এখানে একটির উল্লেখ করা গেল। রামমোহন মাতার সঙ্গে মাতামহের গৃহে গিয়াছিলেন। মাতামহের স্নেহে শিশুর হৃদয় সহজেই বশীভুত হইয়া পড়িল ও শ্যাম ভট্টাচার্য মহাশয় কেবলমাত্র পূজা করিয়াছেন, এমন সময়ে রামমোহন আসিয়া তাহার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। ভট্টাচার্য মহাশয় বিন্ধপত্ৰ দিয়া আশীৰ্বাদ করিলেন। শিশু বিন্ধপত্রের মর্যাদা বুঝতে না পারিয়া তাহা মুখে পুরিয়া দিল। বৈষ্ণবের পুত্রকে বিশ্বপত্র মুখে দিতে দেখিয়া মাতা তারিণী দেবী শিহরিয়া উঠিলেন। তিনি তাড়াতাড়ি পুত্রের মুখ হইতে পাতাগুলি ফেলিয়া দিয়া কহিলেন-“বাবা, আপনি পরম বৈষ্ণবের পুত্রকে বেলপাত খাওয়াইতেছেন, এ আপনার ভারী অন্যায়।” কন্যার কথায় ভট্টাচার্য মহাশয়ের ক্ৰোধ কুল ছাপাইয়া উঠিল। তিনি র্তাহার এই স্নেহের অবমাননায় অধীর হইয়া অভিসম্পাত দিলেন-“তোর এই সস্তান বিধমী হইবে।” পিতার অভিসম্পাত শুনিয়া ভয়ে কন্যার মুখ শুকাইয়া গেল, চোখে ঝরনার ধারা জাগিয়া উঠিল। কন্যার কাতর মুখের পানে চাহিয়া ব্ৰাহ্মণের রোষ কিন্তু এক মূহুৰ্তও টিকিতে পারিল না। তিনি তঁহাকে সাস্তুনা দিয়া কহিলেন-“মা, আমি ক্ৰোধবশে যে অভিসম্পাত দিয়াছি, তাহা ব্যর্থ হইবে না। কিন্তু আমি আশীৰ্বাদ করিতেছি, তোমার এই পুত্র অসাধারণ লোক হইবে। দেশবিদেশের লোক ইহার পূজার অর্ঘ্য রচনা করিবে। ইহার কীর্তিতে তোমার স্বামীর বংশ উজ্জ্বল হইবে।” মাতামহের অভিসম্পাত এবং আশীর্বাদ রামমোহনের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হইয়াছিল। রামমোহনের অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় অতি শৈশবেই পাওয়া যায়। পাঁচ বৎসর বয়সে হাতে-খড়ির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি একসঙ্গে দুইটি ভাষা শিখিতে আরম্ভ করিলেন। এই দুইটি ভাষা শিক্ষা করিতে র্তাহার মোটে তিন বৎসর লাগিয়ছিল। আট বৎসর বয়সে তিনি বাংলা ও পারসিতে পণ্ডিত হইয়া উঠিয়াছিলেন। রামমোহনের মনোযোগ এবং অধ্যবসায় অদ্ভুত ছিল। সেই বয়সেই তিনি গ্রন্থের ভিতর ডুবিয়া থাকিতেন। বালসুলভ কোন চাঞ্চল্য তঁহার ছিল না। খেলাধুলার দিকেও মনোযোগ ছিল না; দিবারাত্রি সরস্বতীর আরাধনায় তঁহার কাটিয়া যাইত। সুতরাং দেবীও প্ৰসন্ন হইয়া তাহাকে বর দান করিয়াছিলেন। রামমোহনের তীক্ষ্ণ ধী ও অপূর্ব প্রতিভা দেখিয়া তাহার ভবিষ্যৎ যে অত্যন্ত উজ্জ্বল, সে সম্বন্ধে কাহারও কোন সন্দেহ ছিল না। এই সময়ে রামমোহনের আরবি শিক্ষার দিকে ঝোক পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তখন আরবি শিখাইবার উপযুক্ত মৌলবি ছিল না, আরবি শিখিবার জন্য পাটনায় যাইতে হইত। নয়। বৎসরের শিশুকে পাটনার মত দূরতর স্থানে পাঠাইতে পিতামাতার মন সহজেই