পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা রামমোহন রায় \ළු শঙ্কিত হইয়া পড়ে। সুতরাং রামমোহনের পিতামাতাও শঙ্কিত হইয়া পড়িলেন। কিন্তু অবশেষে পুত্রের আগ্রহই জয়ী হইল। রামমোহন আরবি শিখিবার জন্য পাটনায় প্রেরিত হইলেন। আরবি ভাষা শিক্ষা করিতে তেঁহার তিন বৎসর লাগিয়াছিল। বারো বৎসরে তিনটি ভাষায় যাহা শিখিবার ছিল, সমস্তই তাহার অধিকারভুক্ত হইয়া পড়িল । হিন্দুদের মূর্তির প্রতি বিদ্বেষ এই সময়েই তাহার মনে সাড়া দেয়। মুসলমানদের সঙ্গে থাকিয়া এবং মুসলমান-গ্ৰন্থ পড়িয়া প্রতিমা-পূজার প্রতি তঁহার ঘোরতর অশ্রদ্ধা জাগিয়া উঠে। তখন হইতেই তিনি মূর্তি-পূজার বিরুদ্ধে সুযোগ পাইলেই তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হইতেন। পাটনা হইতে তিনি সংস্কৃত শিক্ষার জন্য বারাণসীতে গমন করেন। সংস্কৃতভাষা শিক্ষা করিতেও তঁহার বিশেষ বেগ পাইতে হয় নাই। অতি অল্প দিনের ভিতরেই সাহিত্য, দর্শন, উপনিষদ, বেদান্ত প্রভৃতি শাস্ত্রে তিনি পরম পণ্ডিত হইয়া উঠিলেন। উপনিষদ প্রভৃতির ভিতর তঁহার মন যাহা খুঁজিয়া ফিরিতেছিল, তাহাই লাভ করিল। মূর্তি-পূজার অসারত্ব সম্বন্ধে তীহার মনে যতটুকু সংশয় ছিল, তাহাও ঘুচিয়া গেল; সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুধর্মের ও সমাজের কুসংস্কার সম্বন্ধে তিনি তীব্রভাবে আলোচনা আরম্ভ করিলেন। তিনি যাহা সত্য বলিয়া মনে করিতেন, বৃদ্ধদের মুখের উপরেও তাহা ব্যক্ত করিতে দ্বিধা বােধ করিতেন না। সুতরাং বারাণসীর পণ্ডিত-সমাজ তাঁহার উপর অতিমাত্রায় ক্রুদ্ধ হইলেন। কিন্তু বালকের তর্কশক্তি, যুক্তির ধারা এতই প্ৰবল ছিল যে, তাহাকে উপেক্ষা করা চলিত না। যুক্তিতর্কে আঁটিতে না পারিয়া অবশেষে পণ্ডিতেরা তঁহকে বিধমী আখ্যা দান করিলেন। এই সময়েই প্রতিমা-পূজার অযৌক্তিকতা দেখাইয়া রামমোহন র্তাহার প্রথম পুস্তক প্রকাশ করেন। সে সময়ে তাহার বয়স মাত্র ষোলো বৎসর। , সংস্কৃত পড়া শেষ করিয়া রামমোহন দেশে ফিরিয়া আসিয়াও এই যুদ্ধ হইতে নিবৃত্ত হইলেন না। নিজের পুস্তকে তিনি যে মত এবং যুক্তি ব্যবহার করিয়াছিলেন, এখানেও তাহারই প্রচার আরম্ভ করিয়া দিলেন। পিতামাতা, আত্মীয়স্বজনের উপদেশ ত ব্যর্থ হইলই, তঁহাদের শাসনেও তঁহার মন টলিল না। অবশেষে পরম বৈষ্ণব, গোঁড়া হিন্দু রামকান্ত রায় ধর্মদ্রোহী পুত্ৰকে গৃহ হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিলেন! ষোলো বৎসরের বালক গৃহ হইতে বিতাড়িত হইয়াও ভীত হইলেন না। রামমোহন দেশ-দেশান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। এখনকার মত তখন রেল বা স্টিমারের সৃষ্টি হয় নাই। তিনি পায়ে হাঁটিয়াই নানাস্থানে ভ্ৰমণ করিতে লাগিলেন। এই ভ্রমণের ভিতর দিয়া তাহার যে অভিজ্ঞতা লাভ হইয়াছিল, তঁহার জীবনে তাহার মূল্যও অল্প ছিল না। এইরূপ ভ্ৰমণ করিতে করিতে তিনি সুদূর তিব্বতে উপস্থিত হন। সেখানেও ধর্ম ও সমাজের নানারূপ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি মহা আন্দোলন জাগাইয়া তুলিয়াছিলেন। তঁহার বক্তৃতার ফলে অনেকগুলি লোক তঁহার মহাশক্রি হইয়া উঠে। তাহারা তাহকে হত্য করিবার জন্যও চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু কতকগুলি স্নেহ-কোমলা দয়ার্দ্রহৃদয়া রমণীর চেষ্টায় তাহদেয় সে সঙ্কল্প ব্যর্থ হয়। সেই মেয়েদের কাছে ঋণের কথা রামমোহন জীবনে কখন বিস্মৃত হন নাই; সমস্ত জীবন ধরিয়া মেয়েদের প্রতি