পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বটকৃষ্ণ পাল SOG বুত হইয়া তিনি বাংলা গ্রন্থাদি মনোযোগ সহকারে পাঠ করিতে এবং “কলিকাতা রিভিউ”১৬ নামক সুপ্ৰসিদ্ধ ত্রৈমাসিক গ্রন্থগুলির ইংরেজি ভাষায় সমালোচনা করিতে আরম্ভ করেন। কৃষ্ণকাস্তের উইলে’র সমালোচনা পড়িয়া বঙ্কিমচন্দ্ৰ চন্দ্রনাথকে বাংলায় লিখিতে পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন। তখন “বঙ্গদর্শন” বঙ্কিমের মধ্যমাগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্রের** হাতে। চন্দ্রনাথ ১২৮৭ সালের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা হইতে বঙ্গদর্শনে “অভিজ্ঞান শকুন্তল”১৮ এর ধারাবাহিক আলোচনা আরম্ভ করিলেন। এই প্ৰবন্ধ রচনার পূর্বে রামায়ণের বিখ্যাত অনুবাদক পণ্ডিত হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নী* মহাশয়ের সহিত, শান্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করিয়া বিশেষ উপকৃত হইয়ছিলেন। চন্দ্রনাথের “অভিজ্ঞান শকুন্তলা’ সুধীসমাজে বিশেষ আদৃত হইয়াছিল। চন্দ্রনাথ উদার ও স্নেহময় পিতা ছিলেন। তঁহার বন্ধুবাৎসল্যও আদর্শস্থানীয় ছিল। তিনি অমায়িক, বিনয়ী, কর্তব্যপরায়ণ, স্বাধীনচিত্ত ও ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন । বাংলা সাহিত্যের তিনি অকৃত্রিম অনুরাগী ও একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। বাস্তবিকই তিনি বঙ্গসাহিত্যকে যাহা দিয়া গিয়াছেন তাহা অমূল্য। ১৩১৭ সালের ৬ আষাঢ় তিনি পরলোক গমন করেন। তাহার মৃত্যুতে বঙ্গসাহিত্যের যে ক্ষতি হইয়াছে কখনও তােহা পূরণ হইবে কিনা সন্দেহ। বটকৃষ্ণ পাল অতি দরিদ্র গৃহে জন্মগ্রহণ করিয়াও মানুষ নিজ চেষ্টা ও কর্মশক্তির দ্বারা যে প্রচুর অর্থ ও প্রভূত সম্মান লাভ করিতে সমর্থ হয়, তাহা বাংলার অন্যতম ব্যবসায়ী প্রবার স্বৰ্গত বটকৃষ্ণ পাল মহাশয়ের জীবনকথা আলোচনা করিলে জানিতে পারা যায়। প্রায় তিনশত বৎসর পূর্বে গন্ধবণিক জাতীয় পাল উপাধিধারী কোনাে ব্যক্তি ব্যবসায় উপলক্ষে হাওড়ায় আসিয়া শিবপুরে বাস করিয়াছিলেন। সেই বংশে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে স্বগীয় বটকৃষ্ণ পাল মহাশয় জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম লক্ষ্মীনারায়ণ পাল ও মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী। অতি অল্প বয়সেই বটকৃষ্ণ মাতৃপিতৃহীন হন। তঁহাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। কাজেই তাহার ভাগ্যে বিদ্যাশিক্ষা করা হয় নাই। পাঠশালায় তিনি অতি সামান্য মাত্র শিক্ষা প্ৰাপ্ত হইয়াছিলেন। বারো বৎসর বয়সে তিনি তঁহার মাতুল রামকুমার দে মহাশয়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন। তখন হইতে র্তাহাকে অর্থার্জনের চিস্তা করিতে হয়। কলিকাতায় নূতনবাজারে রামকুমারের একখানি মশলার দোকান” ছিল; ঐ দোকানেই বটকৃষ্ণের কর্মজীবনের হাতেখড়ি আরম্ভ হয়। কিন্তু মাতুলের দোকানখানি ছোট ছিল বলিয়া অধিক দিন তথায় তাহার মন টিকিল না। তিনি ১৬ মাতাপিতৃহীন শুদ্ধ প্রয়োগ।