পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলাদেশে যে-সকল মহাপুরুষ সংস্কৃতজ্ঞ ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতের গৃহে জন্মগ্রহণ করিয়া পরে ইংরেজি শিক্ষা দ্বারা যথেষ্ট সম্মান ও অর্থ উপার্জন করিয়া বাংলার মুখোজুল করিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী অন্যতম। হরপ্রসাদের পিতার নাম ছিল রামকমল ন্যায়রত্ন; তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন এবং নিজে টােল করিয়াছিলেন। তঁহাকে মধ্যে মধ্যে টোল ছাড়াও পিতা এবং পিতামহের টোলে পড়াইতে হইত। রামকমল সম্বন্ধে মহাত্মা রাজা রামমোহন রায়ের পুত্র রমাপ্রসাদ রায় লিখিয়াছিলেন- ‘বাংলার সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতগণের প্রায় অর্ধেকই রামকমল ন্যায়রত্নের ছাত্র।” যশোহর কুমীয়া গ্রামে ১ এই ভট্টাচার্য পরিবারের পূর্ববাস ছিল। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ঐ বংশের মাণিক্য তর্কভূষণ গঙ্গাস্নান করিতে আসিয়া ২৪ পরগণা জেলার নৈহাটি গ্রামে বসবাস আরম্ভ করেন। ইনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের পিতৃপিতামহ ছিলেন। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ২২ আগ্রহায়ণ মঙ্গলবার নৈহাটি গ্রামে হরপ্রসাদের জন্ম হয়। তিনি পিতার পঞ্চম পুত্ৰ” ছিলেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে নৈহাটিতে প্রথম একটি ইংরেজি বিদ্যালয় খোলা হয় এবং হরপ্রসাদ ঐ বিদ্যালয়ে শিক্ষারম্ভ করেন। স্কুলের শিক্ষক একদিন হরপ্রসাদকে শাস্তি দেওয়ায় পিতা হরপ্রসাদকে স্কুলে যাইতে নিষেধ করেন। পরে কয়েক মাস বসিয়া থাকিবার পর উক্ত বিদ্যালয়ে হরপ্রসাদ পুনরায় পড়িতে যান। ঐ বৎসর রথের পর অমাবস্যার দিন তাহার পিতার গঙ্গালাভ হয়।*।। সে সময়ে হরপ্রসাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা নন্দকুমার ন্যায়চষ্ণু* কঁদি (মুর্শিদাবাদ) স্কুলের হেডপণ্ডিত ছিলেন। পিতার শ্ৰাদ্ধাদি সম্পাদনা করিয়া নন্দকুমার হরপ্রসাদকে কঁদিতে লইয়া যান ও স্কুলে ভরতি করিয়া দেন। কিন্তু তথায় মাত্র ছয়সত মাস কাল তাহাকে থাকিতে হইযাছিল। জ্যেষ্ঠাগ্রাজের মৃত্যুর পর হরপ্রসাদ নৈহাটিতে ফিরিয়া আসেন ও তথাকার স্কুলে পড়িতে থাকেন। মধ্যে কয়েকমাস তিনি ভাটপাড়ায় এক টােলে পড়িয়াছিলেন বটে, কিন্তু পুনরায় স্কুলে গিয়াছিলেন। গ্রাম্য বিদ্যালয় হইতে বৃত্তি লাভ করিয়া তিনি কলিকাতায় পড়িতে গিয়াছিলেন। সে সময় অর্থাভাবে তাহাকে দারুণ কষ্ট ভোগ করিতে হইয়াছিল। নানাপ্রকার বাধা বিপত্তির পর তিনি সংস্কৃত কলেজে ভরতি হন ৬ ও ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে একাদশ স্থান অধিকার করিয়া বৃত্তি” পাইয়া এনট্রান্স পাশ করেন। এফ.এ পরীক্ষায়ও তিনি বৃত্তি পাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু বি.এ পরীক্ষায় কোন বৃত্তি পান নাই”। তিনি সংস্কৃত কলেজ হইতে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম হন এবং বহু পুরস্কার ও বৃত্তি লাভ করেন। সংস্কৃত কলেজ হইতে সংস্কৃতে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় তঁহাকে শাস্ত্রী’ উপাধি প্ৰদান