Σ. Σ σ' বঙ্গ-গৌরব নিজের চেষ্টায় একাধারে বাণী ও কমলার কৃপাভাজন হইয়াছিলেন। এরূপ অবস্থায় অনেকেরই অহমিকা দেখা যায়, কিন্তু তেঁহতে তাহা হয় নাই। তিনি গুণের ও গুণীর আদর করিতে জানিতেন। তঁহার কলিকাতার পটলডাঙা স্ট্রিটের বাসভবনে বহু গুণী ব্যক্তির সমাগম হইত। তাহার দানও কম ছিল না। পুথির তালিকা প্রকাশের জন্য তিনি এশিয়াটিক সোসাইটিকে ১৮ হাজার টাকা দিয়াছিলেন। নৈহাটির স্কুলেও তিনি ৩০ হাজার টাকা দিয়া গিযছেন। দরিদ্র ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের পক্ষে এই দান সামান্য নহে। তাহা ছাড়া তাহার বহু ক্ষুদ্র দান ছিল তাহার সংবাদ তিনি কখনও কাহাকেও জানিতে দেন নাই। ১৩৩৮ সালের ১ অগ্রহায়ণ, ইংরেজি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তিনি নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন। তাহার শব্ব কলিকাতার বাড়ি হইতে নৈহাটিতে লইয়া গিয়া গঙ্গাতীরে সৎকার করা হইয়াছিল। গিরিশচন্দ্ৰ ঘোষ সুপ্ৰসিদ্ধ নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ বাংলার নাট্য-সমাজে অদ্বিতীয় ছিলেন। তঁহার নাটকাদি এক সময়ে বাংলার নাট্যজগতে প্ৰথম স্থান অধিকার করে এবং এখনও পরম সমাদরে পঠিত ও অভিনীত হইয়া থাকে। এই নাট্যরচনায় তিনি যেভাবে বঙ্গ-সাহিত্যের সহিত সংশ্লিষ্ট হন। তাহাও অভূতপূর্ব। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক, কাল্পনিক ও ধর্মভাবপুর্ণ অনুন সত্তব খানি নাটক, গীতি-নাট্য ও প্রহসন তিনি প্রণয়ন করিয়া গিয়াছেন। ইহা তাহার লিখিবার অসাধারণ শক্তির পরিচয়। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের অনেকগুলি উপন্যাসকে নাটকাকারে পরিণত করিয়া ইনি বঙ্গের রঙ্গালয়ের স্মৃদ্ধি প্ৰদান করিয়াছেন এবং তদ্বারা বঙ্গসাহিত্যের পরিপুষ্টি বহুদূর বিস্তৃত হইয়াছে। তাহার স্বলিখিত নাটকগুলি কি ভাষায়, কি ভাবে, স্বভাবতই গভীর ও হৃদয়গ্রাহী; সঙ্গীত রচনাও তেমনি সুমধুর। পৌরাণিক বহু উপাখ্যানকে নাটকরূপে প্রবর্তিত করিয়া তিনি সেগুলিকে সাধারণ জনসমাজে সুপরিচিত করেন। তঁহার এই প্রচেষ্টা ব্যতীত এই সকল আখ্যানবস্তুর বিষয় হয়তো বহুলোকের নিকট অজ্ঞাতই থাকিত । র্তাহার পৌরাণিক নাট্যগ্রন্থগুলির মধ্যে জনা’, ‘পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস, প্রভৃতি বিশেষ সমাদর লাভ করে। সামাজিক নাটকগুলিও বিশেষ সমস্যামূলক ও শিক্ষাপ্ৰদ হইয়াছিল। তাহার মধ্যে ‘বলিদান” ও “প্ৰফুল্ল”, “শাস্তি কি শান্তি’, প্রভৃতি নাটকগুলি আজও বহু সমাদরে অভিনীত হইয়া থাকে।