পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
১১৭

শ্রেণিভুক্ত করেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিলাতের ‘রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির’ বিশিষ্ট সদস্য ২৩ মনোনীত হইলে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হইতে তাঁহার সংবর্ধনা করা হয়। এই উপলক্ষ্যে তাঁহাকে একটি গরদের জোড়, একটি সোনার আংটি ও একটি রূপার চন্দনের বাটি দেওয়া হইয়াছিল।  ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের শতবার্ষিক উৎসব উপলক্ষে গভর্নর লর্ড লিটন কলেজে শাস্ত্রী মহাশয়ের তৈলচিত্র প্রতিষ্ঠা করেন। কাশীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁহাকে ফেলো মনোনীত করিয়াছিলেন এবং বিহার-উড়িষ্যা রিসার্চ সোসাইটি' তাঁহাকে বিশিষ্ট সদস্য করিয়া লইয়াছিলেন।

 লেখক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বলিয়া বাংলাদেশের লোক চিরদিন হরপ্রসাদের নাম শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিবে। তিনি পঠদ্দশাতে যে প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন, তাহা পরে ‘ভারতমহিলা' নামে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইয়াছিল এবং এ বিষয়ে উহা প্রামাণ্য গ্রন্থ হইয়া রহিয়াছে।

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শনের সপ্তমবর্ষে শাস্ত্রী মহাশয়ের 'বাল্মীকির জয়’২৪ পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছিল। ইহা গদ্য-কাব্য। এই পুস্তকখানি বহু ইউরোপীয় ও ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হইয়াছে। বঙ্গদর্শনের নবম বর্ষে ১২৮৯ সালে তাঁহার ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘কাঞ্চনমালা' ২৫ প্রকাশিত হইয়াছিল। 'মেঘদূত ব্যাখ্যা' নাম দিয়া তিনি মেঘদূতের অনুবাদ প্রকাশ করিয়াছিলেন। সে সময়ে ঐ পুস্তক অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট বলিয়া লোকে তাহার নিন্দা করিয়াছিল, কিন্তু পুস্তকখানি তাঁহাকে অমর করিয়া রাখিবে। তিনি ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস' ২৭ লিখিয়াছিলেন, ইহাতে হিন্দুযুগ বা প্রাচীন হিন্দুদিগের বিবরণ আছে। এই ইতিহাস স্কুলপাঠ্য হওয়ায় তিনি উহা হইতে ৫০ হাজার টাকা পাইয়াছিলেন।

 প্রত্নতাত্ত্বিকদিগের মধ্যে হরপ্রসাদের স্থান অতি উচ্চে। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রই এ বিষয়ে হরপ্রসাদের পথপ্রদর্শক ছিলেন। হরপ্রসাদ তাঁহার কার্যদক্ষতার দ্বারা গুরুকে ও ছাড়াইয়া গিয়াছিলেন। ঐতিহাসিক হিসাবেও তাঁহার সমকক্ষ খুব কমই দেখা যায়। হরপ্রসাদ ভারত ইতিহাসের হিন্দুযুগ সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন, তাহা অপেক্ষা তত্ত্বপূর্ণ ও সুন্দর করিয়া কেহই এ পর্যন্ত লিখিতে পারেন নাই।

 বৌদ্ধধর্ম, বিশেষ মহাযান সম্বন্ধে, হরপ্রসাদের জ্ঞান অতি গভীর ছিল। অনেক এই জন্য তাঁহাকে বৌদ্ধ মনে করিত। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সম্পাদিত 'নারায়ণ' মাসিক পত্রে বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে তাঁহার বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছিল। তন্ত্রশাস্ত্রেও হরপ্রসাদের যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল; নেপালে যাইয়া তিনি হিন্দুতন্ত্র ও বৌদ্ধতন্ত্রের প্রভেদ ভাল করিয়া বুঝিয়াছিলেন।

 শাস্ত্রী মহাশয় ইংরেজি শিক্ষার মোহে মুগ্ধ হইয়াও হিন্দুপূজা ছাড়েন নাই। তিনি সন্ধ্যাআহ্নিক করিতেন। প্রতি বর্ষে নিজের জন্মতিথি পূজা ও মাতাপিতার বার্ষিক শ্রাদ্ধ করিতেন। তিনি হিন্দুদিগের আচার-নিষ্ঠা ত্যাগ করেন নাই।

 তিনি একজন মানুষের মত মানুষ ছিলেন। দারিদ্র্যের ক্রোড়ে লালিতপালিত হইয়া