পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSS বঙ্গ-গৌরব করিলেন। ফলে, অল্পকালের মধ্যেই বুঝিতে পারিলেন যে, হােমিওপ্যাথি প্রথায় সত্য নিহিত রহিয়াছে**। তখন তাহার মত পরিবর্তিত হইল। হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসার গুণ সাধারণ্যে প্রচার করিবার জন্য তিনি আপন শক্তি নিয়োজিত করিলেন। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে** ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বঙ্গীয় শাখার চতুর্থ বাৎসরিক অধিবেশনে ডাক্তার সরকার সমগ্র অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকগণের সম্মুখে প্রচলিত চিকিৎসা প্ৰণালীর কতকগুলি দোষ কীর্তন করিয়া, হ্যানিমানের আবিষ্কৃত হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা-প্ৰণালীর যুক্তিযুক্ততা প্রচার করিলেন। সভামধ্যে বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হইল, ফলে, তঁহকে চিকিৎসক সমাজ হইতে একরূপ বিদূরিত করা হইল। কিন্তু তিনি সমস্ত ভুলিয়া সত্যেরই অনুসরণ করিয়াছিলেন। পরিশেষে সত্যেরই জয় হইয়াছিল এবং কালে মহেন্দ্রলাল সমসাময়িক চিকিৎসকগণের মধ্যে অগ্রগণ্য হইয়াছিলেন। মহেন্দ্রলাল ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভ্যপদে ১৫ নিযুক্ত হন। তিনি “ফাকালটি অব মেডিসিনের”১৬ প্রতিনিধিরূপে সিন্ডিকেটে যোগদানের সময়, হােমিওপ্যাথ বলিয়া অন্যান্য চিকিৎসক সভ্যগণ বিশেষ বাধার সৃষ্টি করিয়াছিলেন; এমন কি তঁহার এম. ডি ডিগ্রি কড়িয়া লওয়ার জন্যও চেষ্টা করা হইয়াছিল। কিন্তু শেষে তিনি জয়লাভ করিয়াছিলেন। তিনি চারি বৎসরকােল “ফ্যাকলটি অব আর্টের সভাপতি ছিলেন। দশবৎসর কােল তিনি সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন এবং ভাইস চ্যান্সেলারের অনুপস্থিতিতে সাধারণত তঁহাকেই সভাপতির কার্য করিতে হইত। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথম হইতে মহেন্দ্রলাল ‘ক্যালকাটা জার্নাল অব মেডিসিন’১৭ নামক একখানি চিকিৎসা বিষয়ক মাসিক পত্রের প্রকাশ আরম্ভ করেন। পর বৎসর এই পত্রিকার এক সংখ্যায়** “ভারতীয়গণের বিজ্ঞান-চৰ্চার জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের আবশ্যকতা”।* সম্বন্ধে তিনি একটি বিশেষ যুক্তিপূর্ণ প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করেন। ইহাই ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান-সভা স্থাপনার প্রথম সূচনা। নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া অক্লান্ত চেষ্টার ফলে, ছয় বৎসর পরে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্রলাল বিজ্ঞান-সভা স্থাপনে সমর্থ হন। ইহাই সমগ্র ভারতের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার সর্বপ্রথম ও অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানের বহু প্ৰসিদ্ধ বিজ্ঞান অধ্যাপক এখানে শিক্ষালাভ করিয়াছেন এবং সুবিখ্যাত স্যার সি. ভি. রমনাই” এই বিজ্ঞানাগারেই গবেষণা করিয়া কৃতকার্য হইয়া “নোবেল প্রাইজ পাইয়াছেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত ডাক্তার সরকার বিজ্ঞান-সভার সম্পাদক ও প্রাণস্বরূপ छिब्लन् । মহেন্দ্রলাল ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতার অনারারি প্রেসিডেন্সি ম্যাজিষ্ট্রেট পদে নিযুক্ত হন। শারীরিক অসুস্থতা নিবন্ধন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঐ পদ পরিত্যাগ করেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য মনোনীত হন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে তিনি কলকাতার শেরিফের পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন।