পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহেন্দ্রলাল সরকার ܓ ܬ মহেন্দ্রলাল বহুকাল ধরিয়া কলিকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার নির্বাচিত হইয়াছিলেন। স্বাস্থ্যবিভাগে তাহার অভিমত সাদরে গৃহীত হইত। তিনি বহুকাল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলের সভ্য ছিলেন এবং তথাকার কাউন্সিলেরও সদস্য নির্বাচিত হইয়াছিলেন তিনি ইণ্ডিয়ান মিউজিয়ামেরও একজন ট্রাসিন্ট ছিলেন এবং ইউরোপ ও আমেরিকার অনেকগুলি বিখ্যাত সভার সদস্যপদে মনোনীত হইয়াছিলেন। মহেন্দ্রলাল ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নমেন্টের নিকট হইতে বিশেষ সম্মানসূচক সি, আই, ই উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে তিনি অনারারি ডি. এল. উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। যেমন অর্থার্জন করিয়াছেন তেমন দানেও তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন। তিনি প্রতিদিন বহু দরিদ্রকে বিনামূল্যে ব্যবস্থা ও ঔষধাদি দান করিতেন; নিতান্ত দরিদ্রের পথ্যেরও ব্যয়ভার বহন করিতেন। একবার দেওঘর বাসকালীন কুণ্ঠরোগীদিগের দুর্দশা অবগত হইয়া তিনি বিশেষ বিচলিত হইয়া পড়েন এবং তাঁহাদের জন্য কয়েক সহস্র টাকা ব্যয় করিয়া একটি আশ্রয়বাটী নির্মাণ করাইয়া দেন। ডাক্তার সরকারের সহধর্মিণীর নাম অনুসারে আশ্রমের নাম “রাজকুমারী কুষ্ঠাশ্ৰম” ২১ রাখা হইয়াছে। অবিশ্রাস্ত কার্যে ব্যস্ততার মধ্যে মহেন্দ্রলালের স্বাস্থ্য ভাল থাকিত না, মধ্যে হাঁপানি রোগে তিনি বিশেষ কষ্ট পাইতেন। তদুপরি চিকিৎসাসূত্রে কয়েকটি স্থানে যাইয়া তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হইয়াছিলেন। এইজন্য শেষ বয়সে তিনি বিশেষ দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিলেন। অবশেষে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের শেষে তিনি এক কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হইয়া বিশেষ কষ্ট পাইতে থাকেন এবং ঐ রোগেই ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে, ৭১ বৎসর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন। নিরক্ষর সমাজে জন্মগ্রহণ করিয়া এবং প্রতিকুল অবস্থার সঙ্গে স্নংগ্রাম করিয়া এরূপ উন্নতি ও মর্যাদালাভ পৃথিবীর যে কোন দেশেই স্মরণীয় ও গৌরবজনক। মহেন্দ্রলাল নানা গুণের অধিকারী ছিলেন এবং অসত্যকে তিনি অস্তরের সহিত ঘূণা করিতেন। বিদেশীয় পোষাক পরিপন্থী বলিয়াই মনে করিতেন। শিশুকাল হইতেই পরমেশ্বরে তঁহার অটল বিশ্বাস ছিল। মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে, রোগযন্ত্রণার মধ্যে, তিনি কতকগুলি সঙ্গীত রচনা করিয়াছিলেন। সেই সঙ্গীতগুলিতে ২২ তাহার স্বাভাবিক ধর্মভাব পরিস্ফুট হইয়া রহিয়াছে।