পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বঙ্গগৌরব শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা দেখাইয়া এবং নারীজাতির উন্নতি-কল্পে চেষ্টা করিয়া রামমোহন এ ঋণ পরিশোধ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। রামমোহনের কষ্টের বার্তা এ-দিকে গৃহে আসিয়া পৌঁছিল। পিতামাতার হৃদয় পুত্রের বিপদে আর স্থির থাকিতে পারিল না। তাহারা তঁহাকে গৃহে ফিরাইয়া আনিলেন। এই সময় রামমোহনের বয়স কুড়ি বৎসর মাত্র। গৃহে ফিরিয়া রামমোহন আবার নূতন করিয়া ভাষা-শিক্ষায় মনোনিবেশ করিলেন। দেখিতে দেখিতে ইংরেজি, হিব্রু, গ্রিক, ল্যাটিন, ফ্রেঞ্চ, উর্দু ভাষা তীহার আয়ত্ত হইয়া গেল। রামমোহন মোটের উপর দশটি ভাষা জানিতেন। সেকালে তাহার মত এত ভাষাবিদ পণ্ডিত আর একজনও ছিলেন না। এই ভাষা-শিক্ষার ভিতর দিয়া প্রত্যেক জাতির সামাজিক ও ধর্ম-ধারা তাহার বৈশিষ্ট্য-অনুসন্ধিৎসু মনের কাছে ধরা পড়িল। রামমোহনের অদ্ভুত প্রতিভার দৃষ্টান্ত স্বরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ করিলেই এ কথা সপ্রমাণ হইবে। তিনি বৃহৎ সাতকাণ্ড রামায়ণ” একদিনে শেষ করিয়াছিলেন। এ শেষ করা কেবল পড়িয়াই শেষ করা নহে; প্রত্যেকটি শ্লোকের গুঢ় অর্থ, রচনার ভঙ্গি, ভাষার দোষগুণও এই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাহার কাছে একেবারে দিবালোকের মত সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছিল। রামমোহন সমাজের বিরুদ্ধে এবং প্রচলিত ধর্মপদ্ধতির বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছিলেন, তাহাতে দেশ-দেশান্তর হইতে মহামহােপাধ্যায়েরা তাহার সহিত শাস্ত্ৰবিচারের জন্য আসিয়া উপস্থিত হইতেন। এই বিচারে কখন কোনো পণ্ডিত জয়ের মাল্য জিনিয়া লইতে পারেন নাই একবার একজন তান্ত্রিক পণ্ডিত তাহার সহিত তন্ত্রশাস্ত্ৰ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে আসেন। তন্ত্র সম্বন্ধে রামমোহন কখনও চর্চা করেন নাই ; কিন্তু পরাজয় স্বীকার করাও তাহার স্বভাববিরুদ্ধ। তিনি তাই একদিন পরে বিচারের দিন স্থির করিয়া শোভাবাজারের স্বগীয় রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুরের নিকট হইতে একখানা তন্ত্র আনাইয়া লাইলেন। একদিনে তিনি সেই দুরূহ। তন্ত্রগ্রন্থ এরূপভাবে অধিগত করিয়াছিলেন যে, পরের দিন বিচারের আসরে সেই খ্যাতনামা তান্ত্রিক পণ্ডিতের যুক্তি র্তাহার যুক্তির সম্মুখে সূর্যালোক-ছিন্ন তুষারের মত মিলাইয়া গেল। রামমােহনের পিতা মনে করিয়াছিলেন, তিব্বতের দুঃখ পুত্রকে হয় তা খানিকটা শান্ত করিয়াছো-সমাজের বিরুদ্ধে আর বিদ্রোহ করিতে র্তাহার সাহস হইবে না। কিন্তু রামমোহনের প্রকৃতি চিনিতেই তঁহার ভুল হইয়াছিল। গৃহে ফিরিয়া পুত্রের সেই বিদ্রোহের স্পাহা কিছুমাত্র কমিল না। সমাজ ও ধর্মের প্রতি আক্রমণ র্তাহার সমানভাবে চলিতে লাগিল। অবশেষে সমাজচ্যুত হইবার ভয়ে ভীত হইয়া তিনি দ্বিতীয়বার পুত্ৰকে গৃহ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন। নিভীক রামমোহন এবারেও এই নির্বািসন-দণ্ড নির্বিকার চিত্তে গ্রহণ করিয়াছিলেন। ১২১০ সালে রামমোহনের পিতার মৃত্যু হয়। বিধমী পুত্রকে পিতার সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিবার জন্য চেষ্টা চলিতে লাগিল। এবার আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে মাতাও পুত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াইলেন। হাইকোর্টে নালিশ রুদ্ধ হইল। প্ৰথমে রামমোহন মামলা