পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহারাজা মণীন্দ্ৰচন্দ্ৰ Sම් 6. তাহার নিজের জন্য ব্যয় কিছু ছিল না বলিলেই হয়; কিন্তু জনহিতকর কার্যে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা দান করিতেন। র্তাহার মৃত্যুর পর তঁহার শাশুড়ী রাণী হরসুন্দরী বিষয়াধিকারিণী হন; কিন্তু তিনি দৌহিত্র মণীন্দ্ৰচন্দ্রকে সম্পত্তির অধিকার অর্পণ করিয়া কাশীবাস করিতে থাকেন। মহারাণী স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর পর কৃষ্ণনাথের ভাগিনেয়। মণীন্দ্ৰচন্দ্র এই বিপুল সম্পত্তি লাভ করেন (১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে)। তাহার পিতার অবস্থা সচ্ছল ছিল না। র্তাহার বয়স যখন দুই বৎসর তখন তঁহার জননীর মৃত্যু হয় এবং দ্বাদশ বৎসর বয়সে। তঁহার পিতার মৃত্যু হয়। চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত র্তাহাকে কাশিমবাজার রাজসংসার প্রদত্ত মাসিক বৃত্তির উপর নির্ভর করিয়া বৃহৎ পরিবার পালন করিতে হইয়াছিল। তাহার পর মাতামহের সম্পত্তি র্তাহার অধিকারে আসে। জীবনের প্রধান ভাগ মধ্যবিত্ত গৃহস্থভাবে কাটাইয়া তিনি যে বিপুল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছিলেন, তাহার ফলস্বরূপ তিনি মাতামহের বিপুল সম্পত্তি সদব্যবহার করিতে পারিয়াছিলেন। মহারাণী স্বৰ্ণময়ীর ন্যায় মহারাজা মণীন্দ্ৰচন্দ্ৰও বিলাসবজিত জীবন যাপন করিয়া গিয়াছেন। তঁহার জমিদারির প্রায় সমগ্র আয় জনহিতকর অনুষ্ঠানে ব্যয়িত হইত। মৃত্যুকাল পর্যন্ত সদনুষ্ঠানে তঁহার ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্ৰায় চারি কোটি টাকা। বহরমপুরে মাতুলের স্মৃতিচিহ্ন কৃষ্ণনাথ কলেজে তিনি প্রতি বৎসর ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করিতেন। কলেজ ও স্কুলসংলগ্ন ছাত্রাবাসের জন্য বৎসরে আরও ১৫ হাজার টাকা দিতেন। কলেজবাটীর সংস্কার সাধনাৰ্থ তিনি দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। বহরমপুরে একটি শিল্পবিদ্যালয় ও একটি মেডিক্যাল স্কুল স্থাপনের ইচ্ছা তঁহার ছিল এবং মেডিক্যাল স্কুলের জন্য ৫০ হাজার টাকা তিনি গভর্নমেন্টের কাছে গচ্ছিত রাখিয়াছিলেন। তথাপি তাহার মনোভিলাষ পূর্ণ হয় নাই-স্কুল দুইটি স্থাপিত হয় নাই। র্তাহার প্রদত্ত অর্থে কলিকাতায় একটি শিল্প-বিদ্যালয় ও তৎসহ একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় এবং ইথোরায় একটি খনি-বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে। নানাস্থানে আরও কয়েকটি উচ্চ ও মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করিয়া সেইগুলির পরিচালনের জন্য তিনি বৎসরে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করিতেন। তিনি কাশীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লক্ষ টাকা এবং আচার্য স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান-কলেজে দুই লক্ষ টাকা দান করেন। রংপুর কলেজে তিনি ৫০ হাজার টাকা দান করিয়াছিলেন। কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়, দৌলতপুর কলেজ, পুরী বেদ বিদ্যালয়, দিল্লির মহিলা ডাক্তারি স্কুল প্রভৃতি আরও নানা প্রতিষ্ঠানে তিনি অনেক টাকা দান করিয়াছিলেন। দুঃস্থ ছাত্ৰগণের সাহায্যাৰ্থ তিনি সর্বদা মুক্তহস্ত ছিলেন। তঁহার অর্থসাহায্যে বহু বঙ্গীয় যুবক বিদেশে গিয়া উচ্চ শিক্ষা লাভ করিয়া আসিয়াছেন। মহারাজা মণীন্দ্ৰচন্দ্রের জীবন বলিতে গেলে একটি নিরবচ্ছিন্ন দানের ইতিহাস। লক্ষ্য ও আগ্রহ ছিল। স্বদেশীর যুগে প্রধানত তঁহার আগ্রহে ও আংশিক অর্থ-সাহায্যে বাংলায় সর্বপ্রথম চিনামাটির বাসনের কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। নুতন কলকারখানা প্রতিষ্ঠার