পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sw বঙ্গ-গৌরব উদ্যোগ হইলেই তিনি প্রচুর অংশ ক্রয় করিয়া প্রতিষ্ঠাতৃবৰ্গকে উৎসাহিত করিতেন। তিনি নিজেও কলকারখানা স্থাপন করিয়া শিল্পের প্রসারের জন্য প্রভূত চেষ্টা ও অর্থব্যয় করিতেন। কলকারখানায় ও ব্যবসায়ে অর্থবিনিয়োগ করিয়া অর্থলাভ অপেক্ষা শিল্পবাণিজ্যের বিস্তৃতি সাধন তাহার বিশেষ লক্ষ্যের বিষয় ছিল। এইরূপ নিষ্কাম ও নিঃস্বাৰ্থভাবে কাজ করার ফলে, কোন কলকারখানা উঠিয়া গেলে বা ব্যবসায় ফেল করিলে অর্থনাশের আশঙ্কা তাহাকে একটুও বিচলিত করিতে পারিত না। পক্ষান্তরে কোন শিল্প বাণিজ্য- প্ৰতিষ্ঠান সফলতা লাভ করিলে, দেশের ও জনসাধারণের মঙ্গলের কথা ভাবিয়া তাহার আনন্দের সীমা থাকিত না। বাংলা সাহিত্যের উন্নতিকল্পে তাহার রাজ্যোচিত দান সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের পক্ষ হইতে মনীষী রামেন্দ্রসুন্দর ত্ৰিবেদী মহাশয়কে অগ্রণী করিয়া পণ্ডিত রজনীকান্ত গুপ্ত প্ৰমুখ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কয়েকজন সদস্য মহারাজের নিকট সাহায্যপ্রার্থী হইবামাত্র পরিষদের গৃহ-নির্মাণার্থ তিনি আপার সারকুলার রোডে হালসিবাগানে বহুমূল্য জমি দান করেন।” বার্ষিক বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনেরও তিনি প্রথম ও প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন। তাঁহারই গৃহে কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনের অধিবেশন হইয়াছিল। মহারাণী স্বৰ্ণময়ীর বদান্যতাগুণে প্ৰসন্ন হইয়া গভর্নমেন্ট তাহার উত্তরাধিকারিগণকে বংশানুক্রমে মহারাজা উপাধিন্দানে প্রতিশ্রুত ছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গভর্নমেন্ট ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে তারিখে মণীন্দ্ৰচন্দ্ৰকে মহারাজা উপাধি প্ৰদান করেন এবং সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মণীন্দ্ৰচন্দ্রের লোকাস্তরের পর তাহার পুত্ৰ শ্ৰীশচন্দ্ৰ নদী মহাশয় মহারাজা হইয়াছেন। মহারাজা মণীন্দ্ৰচন্দ্ৰ যে কেবল দানশীলতার জন্যই প্ৰসিদ্ধ তাহা নহে, সামাজিকতায়ও তিনি রাজবংশের গৌরব অক্ষুন্ন রাখিয়াছিলেন। বিনয়, আড়ম্বর-শূন্যতা, ধর্মনিষ্ঠা, মহানুভবত তঁহার চরিত্রের বিশেষত্ব ছিল। তিনি পরম বৈষ্ণব ছিলেন; বৈষ্ণবোচিত বিনয় তাহার সহজাত সংস্কার-স্বরূপ ছিল। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে মহারাজা মণীন্দ্ৰচন্দ্ৰ নদী কে. সি. আই. ই উপাধি লাভ করেন। ১৩৩৬ সালের ২৫ কার্তিক তিনি পরলোকে গমন করিয়াছেন।