পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবীপ্রসাদ সর্বাধিকারী Vod তাহার সপ্তম সহােদর মণীন্দ্ৰপ্ৰসাদ খ্যাতনামা লেখক ছিলেন। অপর ভ্রাতারাও সকলেই কৃতবিদ্য ছিলেন। তাঁহার বংশে তিনজন গভর্নমেন্ট কর্তৃক ‘রাজা” উপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন। লইয়া যুক্ত-প্রদেশের বাস করিতেন এবং সিপাহি বিদ্রোহের সময় Brigade Surgeon রূপে গাজীপুরে থাকিয়া নিজ অসাধারণ বুদ্ধিবলে বহু ইংরেজের প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন। সেস্থানে আট দিন বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ থাকিয়া সূৰ্যকুমারকে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করিতে হইয়াছিল; তাহার পর কাশী হইতে বহুসংখ্যক ইংরেজ সৈন্য গাজীপুরে যাইয়া সকলের প্রাণরক্ষণ করে। দেবপ্রসাদের পিতামহ যদুনাথ পদব্ৰজে ভারতবর্ষের প্রায় সকল তীৰ্থস্থান ভ্ৰমণ করিয়াছিলেন এবং সেই ভ্ৰমণ কাহিনি প্রত্যেক দিনের “রোজনামচা”** রূপে স্বহস্তে লিখিয়া গিয়াছেন। ঐ পুস্তক বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক তীর্থভ্ৰমণ”২০ নামে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হইয়াছে। দেবপ্রসাদ গভর্নমেন্টের নিকট হইতে সি. আই.ই, সি. বি.ই ও স্যার উপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন এবং নবদ্বীপ প্রমুখ বহু স্থানের পণ্ডিত-সমাজ কর্তৃক বহু উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। তিনি যেমন পণ্ডিত তেমনিই বিনয়ী ছিলেন। তাহার। পাণ্ডিত্য তিনি প্ৰকাশ করিতেন না, কিন্তু যিনিই ঘনিষ্ঠভাবে তাহার সহিত মিশিবার সুযোগ পাইয়াছেন তিনিই তাহার প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাইয়াছেন। তাহার কাছে বড়-ছোেটর কোন প্ৰভেদ ছিল না, সকলকেই তিনি সমান আদরে স্থান দিতেন এবং তাহাদের যথাসাধ্য সাহায্য করিবার চেষ্টা করিতেন। তঁহাকে সত্যই অজাতশত্রু বলা চলে। তাহার মৃত্যুর পর ছোট-বড় সকলেই এই বলিয়া শোক করিয়াছেন যে, “আমাকেই তিনি সকলের অপেক্ষ বেশি। ভালবাসিতেন।” দেবপ্ৰসাদের জন্মস্থান হুগলি জেলার অন্তৰ্গত রাধানগর গ্রাম, যেখানে মহাত্মা রামমোহন রায়ও জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। প্রধানত তেঁহার চেষ্টাতেই ঐ গ্রামে রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতিমন্দির নির্মিত হইয়াছে এবং “রাধানগর পল্লীসমিতি’ ও ‘প্ৰসন্নকুমার পাঠাগার’ বলিয়া দুইটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হইয়াছে। র্তাহার এই সকল মহদানুষ্ঠান হইতেই বুঝা যায় যে তিনি কখনও রাজধানীর মোহে গ্রাম ও দেশকে ভুলেন নাই! অদ্ভুত ছিল তাহার সংযম ও স্বাৰ্থত্যাগ। জীবনে কেহ কখনও তীহাকে ক্রোধের বশবতী হইয়া একটিমাত্র অন্যায় বা রাঢ় বাক্যও উচ্চারণ করিতে দেখে নাই। দেবপ্রসাদ যে সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হইয়াছিলেন, সে সময়ে নানাকারণে তঁহাকে বিশেষ ধীরতা, সংযম ও বুদ্ধিমত্তার সহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য পরিচালনা করিতে হইয়াছিল। নানা প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও তিনি কর্মে সাফল্য লাভ করিয়াছিলেন। এই সময়ে তিনি বাঙালি যুবকের প্রথম সামরিক শিক্ষার সুযোগ করিয়া দেন। তঁহার চেষ্টায়। University Corps-এর সভ্যগণ কনভোকেশনে প্রথম সামরিক পরিচ্ছদ পরিয়া কুচকাওয়াজ দেখাইয়া সকলের প্রশংসা অর্জন করিয়াছিল। এখন