পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8O বঙ্গ-গৌরব পর্যস্ত সেই স্মরণীয় দিন Khaki Convocation Day বলিয়া গৌরবের সহিত অভিহিত হয় । ছাত্ৰমণ্ডলীর উপর তঁহার এত প্রগাঢ় মেহদৃষ্টি ছিল যে, চিরজীবন তিনি ছাত্রদিগের জন্যই পরিশ্রম করিয়া গিয়াছেন এবং নিজেকেও শেষ পর্যন্ত একজন ছাত্র বলিয়া পরিচয় দিয়া গৌরব অনুভব করিতেন। প্রধানত তঁহার চেষ্টাতেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের “সন্টুডেন্টস ফাণ্ড’ স্থাপিত হইয়াছে এবং তিনি ইহাতে প্রচুর অর্থদান গিয়াছেন। বিদ্যাক্ষেত্রের ন্যায় ক্ৰীড়াক্ষেত্রেও দেবপ্রসাদের প্রতিভার স্ফুরণ দেখা গিয়াছিল। তিনি নিজে একজন বিশিষ্ট খেলোয়াড় ছিলেন এবং তিনিই বাঙালির মধ্যে ক্রিকেট খেলার প্রবর্তন করেন। তাহার পঞ্চম সহােদর নগেন্দ্ৰপ্ৰসাদও সেইরূপ ফুটবল খেলার প্রচলন করিয়াছিলেন। তাহার প্রতিভা ও কর্মশক্তি যে বহুমুখী ছিল তাহাতে সন্দেহ নাই। তিনি কেবল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির সহিতই সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, বহু ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ব্যাঙ্ক এবং ইনসুরেন্স কোম্পানির ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান থাকিয়া দেশের ব্যবসায়েও যথেষ্ট সহায়তা করিয়া প্ৰসিদ্ধি লাভ করিয়া গিয়াছেন। বর্তমানে বহু প্ৰসিদ্ধ ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান প্রধানত তাহার চেষ্টার ফলেই সুপ্রতিষ্ঠিত ও সাফল্যমণ্ডিত হইয়াছে। শেষজীবনে গীতা সভা, রেফিউজ ও বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষাসমিতি লইয়া তাঁহাকে যেরূপ কঠোর শ্রম করিতে দেখা যাইত, তাহা সাধারণত দেখা যায় না। সকলের জন্যই সর্বদা র্তাহার গৃহদ্বার খোলা থাকিত এবং উপদেশ ইত্যাদির দ্বারা সহায়তা করিতে কখনও তাহাকে বিমুখ দেখা যায় নাই। শিক্ষার সহায়তা, অর্থ উপার্জন, জনসেবা প্ৰভৃতি কার্যের সঙ্গে সঙ্গে দেবপ্রসাদ ধর্মচৰ্চাতেও বহু সময় অতিবাহিত করিতেন। তিনি গভীর উদাত্ত কণ্ঠস্বরের অধিকারী ছিলেন এবং যখন গীতা, ভাগবত প্রভৃতি পাঠ করিতেন তখন উহা শুনিয়া সকলেই মুগ্ধ হইতেন। তিনি ধর্মবিষয়ক বহু সভা ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারস্বরূপ ছিলেন। দেবপ্রসাদ কীর্তনগানের বড়ই অনুরাগী ছিলেন। দেশের প্রসিদ্ধ কীর্তনীয়গণ প্রায়ই র্তাহার ‘প্ৰসাদপুর” ভবনে সমবেত হইয়া কীর্তনগানে সকলকে প্রচুর আনন্দদান করিতেন। স্যার দেবপ্রসাদ যে-সকল গুণের অধিকারী ছিলেন এবং যে-সকল মহান কাৰ্য সাধন লোকাস্তরিত’ হইয়াছেন। তঁহার কর্মপ্রেরণা, আদর্শ ও ত্যাগে তরুণ বাংলা অনুপ্ৰাণিত হইয়া উঠিবে এ আশা অনায়াসেই করা যায়।