পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোজাম্মেল হক বঙ্গদেশে সর্বপ্রথম যে কয়জন মুসলমান লেখক বঙ্গভাষাকে আপনাদের জাতীয় ভাষা বলিয়া সগৌরবে স্বীকার করিয়াছিলেন এবং অকুষ্ঠিত চিত্তে চিরজীবন তাহার সেবা করিয়া গিয়াছেন, কবিবর মোজাম্মেল হক সাহেব তঁহাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি আশৈশব বঙ্গভারতীর একনিষ্ঠ সেবক ও সাধক ছিলেন। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে শান্তিপুরের* এক সম্রাস্ত বংশে তাহার জন্ম হয়। শৈশবে পিতৃহীন হইয়া তিনি স্নেহময় মাতামহের ক্রেগড়ে লালিতপালিত হইয়াছিলেন। শান্তিপুর বাংলার একটি প্রাচীন জনপদ।। শিক্ষায়, সভ্যতায়, সম্পদে শান্তিপুর সেকালে একটি বিশিষ্ট নগর ছিল। এইখানেই এক মাইনর স্কুলে তঁহার বাল্যজীবনের শিক্ষাত আরম্ভ হইয়াছিল। তাহার পর তিনি শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে কিছুদিন অধ্যয়ন করিয়া উচ্চশিক্ষা লাভ করেন; কিন্তু অবস্থা-বিপর্যয়ে তিনি উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করিতে পারেন নাই, অল্প বয়সেই তীহাকে স্কুল ছাড়িতে হইয়াছিল। কবি মোজাম্মেল হক যে প্রতিভা লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও আপনার অস্তনিহিত শক্তিবলে স্মৃফুরিত হইয়াছিল। তঁহার ছাত্রজীবনের কল্পলতায় আমরা দুইটি কুসুম বিকশিত হইতে দেখি, একটি তাহার “কুসুমাঞ্জলি” কাব্য এবং অপরটি তাঁহার “অপূর্বদর্শন কাব্য”।* সুতরাং ইহা হইতেই বুঝিতে পারা যায় যে বাল্যকাল হইতেই তাহার স্বভাবগত কবি-প্রতিভা আত্মপ্রকাশ করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। ইহার পর সারাজীবন তিনি বহু গ্ৰন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন। তঁহার কবি ও সাহিত্যিক প্ৰতিভার সম্যক পরিচয় জানিতে হইলে তঁহার রচিত গ্রন্থগুলি পাঠ করা আবশ্যক। ‘কুসুমাঞ্জলি’ ও ‘অপূর্বদর্শন কাব্য’ তাহার এই দুইখানি বাল্যরচনা ছাড়া হজরত মোহাম্মদ” কাব্য, “জাতীয় ফোয়ারা ৭। কাব্য, শাহনামা” কাব্য, মহর্ষি মনসুর’, ‘ফেরদৌসী চরিত’,** ‘প্ৰেমহারা ১১। কাব্য তাপস কাহিনী”, ১২ হাতেমতাই, ১৩ টিপু সুলতান',** 'জোহারা”১৫ প্রভৃতি অমূল্য গ্ৰন্থ তিনি লিখিয়া গিয়াছেন। এক সময়ে তিনি লহরী ১৬ ও ‘মোসলেম ভারত’১৭ নামক দুইখানি মাসিক পত্ৰও সম্পাদনা করিয়াছিলেন। তঁহার অক্লান্ত সাহিত্য-সাধনার জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তাহাকে “কাব্যকণ্ঠ” উপাধি দানে সম্মানিত করিয়াছিলেন। কেবল যে কাব্য ও সাহিত্য লইয়াই তিনি মগ্ন ছিলেন, এমন নহে; তিনি অনেকগুলি স্কুলপাঠ্য পুস্তকও** রচনা করিয়াছিলেন। মুসলমান লেখকগণের মধ্যে তঁহারই পুস্তক সর্বপ্রথম ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনষ্ট্রাকশন কর্তৃক স্কুলপাঠ্যরূপে অনুমোদিত হইয়াছিল। র্তাহার রচিত ‘মহর্ষি