পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ܬ তিনি তঁহার এই প্রিয়তম শিষ্যটিকে নিকটে ডাকিয়া কতকগুলি উপদেশ দিয়া যান। সেই উপদেশগুলিই দেবেন্দ্রনাথের জীবনে নুতন পথের সন্ধান আনিয়া দিয়াছিল। ইহার পর হইতেই তার ধর্মানুসন্ধিৎসাও অতিমাত্রায় বাড়িয়া উঠে। তিনি বড় বড় ধাৰ্মিক পণ্ডিতের সহিত ধর্ম-আলোচনা করিতে করিতে এমন সকল প্রশ্ন করতেন, যাহতে মহামহােপাধ্যায়েরাও অবাক হইয়া যাইতেন। এই সময় একদিন হঠাৎ একখানা উপনিষদের ছেড়া পাতা* তিনি কুড়াইয়া পান। পাতাটি পড়িয়া সমস্ত অর্থ তাঁহার বোধগম্য হইল। না। কিন্তু যেটুকু বুঝিলেন, তাহাতেই মনে হইল-তিনি যাহা খুঁজিতেছেন। ইহার ভিতর দিয়াই তিনি তাহা লাভ করিতে পরিবেন। ইহার পর সেই ছেড়া পাতাখানি লইয়া দেবেন্দ্রনাথ আদি ব্ৰাহ্মসমাজের আচাৰ্য পণ্ডিত রামচন্দ্ৰ বিদ্যাবাগীশের নিকট উহার তাৎপর্য অবগত হইবার জন্য গমন করেন। উপনিষদের ধর্ম এইরূপ আকস্মিক ভাবে দেবেন্দ্ৰনাথের কাছে আত্মপ্ৰকাশ করিয়াছিল। হিন্দু কলেজে দেবেন্দ্ৰনাথ লেখাপড়ায় যথেষ্ট প্রতিভার পরিচয় প্ৰদান করিয়াছিলেন। সেখানকার শিক্ষাও তাহার সমাপ্ত হইয়াছিল। কিন্তু যে জ্ঞান লাভের জন্য দেবেন্দ্রনাথের চিত্ত আকুল হইয়া উঠিয়াছিল, সে জ্ঞান সেখানকার শিক্ষণ তাহাকে দিতে পারে নাই। কলেজ-গৃহে ছাত্রদের চেষ্টায় ‘সাধারণ জ্ঞানোেপার্জন সভা’ নামক একটি সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেবেন্দ্রনাথ সে সভার সভ্য ছিলেন। কিন্তু নামে জ্ঞানোপাৰ্জনী সভা হইলেও জ্ঞান উপার্জনের সুবিধা সেখানে ছিল না; অথচ সভায় নানা রকমের আলোচনার দ্বারা জ্ঞানার্জনের যে একটা সুযোগ পাওয়া যায়, দেবেন্দ্ৰনাথ তাহা বিশ্বাস করিতেন। তাই হিন্দু-কলেজের পাঠ সমাপ্ত করিয়া তিনি তঁহাদের জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই একটি সভা স্থাপন করিলেন। এই সভার নাম হইল “তত্ত্ববোধিনী সভা’। প্রতি মাসেই নিয়মিত ভাবে এই সভার অধিবেশন হইত এবং ধর্ম সম্বন্ধে নানা তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনা চলিত। এই তত্ত্ববোধিনী সভার প্রতিষ্ঠাই দেবেন্দ্রনাথের জীবনের সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ। দেবেন্দ্ৰনাথের বয়স তখন পাঁচশ বৎসর মাত্র। এই তত্ত্ববোধিনী সভা দেশের বহু হিতকর কার্য সম্পাদনা করিয়াছে। তখনকার দিনে ইহা জ্ঞান-চৰ্চার একটি শ্রেষ্ঠ প্ৰতিষ্ঠান ছিল। পূজনীয় ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর হইতে আরম্ভ করিয়া দেশের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি ইহার সভ্য ছিলেন এবং সকলেই ইহার উন্নতির জন্য চেষ্টা, যত্ন ও পরিশ্রম করিয়া গিয়াছেন। দেবেন্দ্রনাথ যদিও সাধারণত বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মালোচনায় মগ্ন থাকিতেন, তথাপি সাংসারিক কর্তব্য-পালনে কখনও তাঁহাকে অবহেলা করিতে দেখা যায় নাই। পুত্রের ক্ষমতা ও কৃতিত্বের পরিচয় পাইয়া দ্বারকানাথ জমিদারি পরিচালনার ভার তঁহার হাতেই ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। ইহার পর তিনি নিশ্চিন্তু হইয়া ব্যবসায়ে মনোযোগ দেন। তাহার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল “কার ঠাকুর এন্ড কোং”।* ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তিত হইবার পর নানা স্থানেই স্কুল-কলেজ গড়িয়া উঠে। কিন্তু এ সকল বিদ্যালয়ে ছাত্রদের জ্ঞানতৃষ্ণ মিটাইবার কোনও উপায় ছিল না। এই অভাব