পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So বঙ্গ-গৌরব দূর করিবার জন্য তত্ত্ববোধিনী সভার সাহায্যে দেবেন্দ্রনাথ কলিকাতায় তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা” নামে একটি নূতন ধরনের বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন। এই তত্ত্ববোধিনী পাঠশালায় উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্রের সঙ্গে লেখাপড়াও শিক্ষা দেওয়া হইত। যাহাতে ধর্মের জটিল তত্ত্বসমূহ ছাত্ৰগণ সহজে বুঝিতে পারে, সেজন্য স্বনামধন্য অক্ষয়কুমার দত্ত” প্রমুখ বিখ্যাত সাহিত্যকদের দ্বারা পুস্তক লিখাইয়া দেবেন্দ্রনাথ এই বিদ্যালয়ে পড়াইবার ব্যবস্থা করেন। বাংলা সাহিত্যের বর্তমান সমৃদ্ধি দেবেন্দ্রনাথের কাছে প্ৰভুত পরিমাণে ঋণী। বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য দেবেন্দ্ৰনাথ যথেষ্ট চেষ্টা ও পরিশ্রম করিয়াছিলেন। বাঙালি যাহাতে সহজ, সরল এবং সাধু বাংলা লিখিতে পারে, বাংলা ভাষার যাহাতে একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য গড়িয়া উঠে, দেবেন্দ্রনাথের লক্ষ্য সেদিকে কম ছিল না। আজ বাংলা ভাষায় মাসিক পত্রিকার অভাব নাই। কিন্তু এ প্রথার প্রবর্তক যে কে, আমরা অনেকেই তাহার সংবাদ রাখি না। বাংলায় দেবেন্দ্ৰনাথের “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাই**। সর্বপ্রথম মাসিক পত্রিকা। তখনকার দিনে ধর্মশাস্ত্ৰ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি নানা বিষয়ের আলোচনা করিয়া এই পত্রিকাখনি বাংলার শিক্ষিত-সমাজের ভিতর যুগান্তর আনয়ন করিয়াছিল। দেবেন্দ্রনাথের সেই তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা এখনও প্রকাশিত হয়-এখনও তাহা লুপ্ত হয় নাই।” তখনকার দিনে আজকালিকার মত সকল রকমের পুস্তক এ দেশে এত সহজ-লভ্য ছিল না। সুতরাং জ্ঞানার্জনের আস্তরিক ইচ্ছা সত্ত্বেও অনেকে পুস্তক পড়িবার সুযোগ পাইতেন না। দেশের এত বড় একটা অভাব দূর করিবার জন্য দেবেন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনী সভার পরিচালনায় একটি গ্রন্থসভা ও পুস্তকাগারেরও প্রতিষ্ঠা করেন। এই পুস্তকালয় এক্ষণে আদি ব্রাহ্মসমাজ লাইব্রেরি’ নামে প্ৰসিদ্ধ। বহু প্ৰাচীন গ্রন্থ এই পুস্তকাগারে সংগৃহীত আছে। মিশনারিরা বড় বড় স্কুল কলেজ স্থাপন করিয়া খ্রিস্টধর্ম প্রচারের যথেষ্ট সুবিধা পাইয়াছিলেন। অনেক হিন্দুর ছেলে তঁহাদের স্কুলে পড়িতে গিয়া তাঁহাদের ধর্ম গ্রহণ করিতেন। হিন্দুদের খ্রিস্টান হইবার এই পথটি বন্ধ করিবার জন্য দেবেন্দ্রনাথের মাথায় বাড়িতে ঘুরিয়া ঘুরিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠার উপযোগিতা বুঝাইয়া দেন। ফলে ইতার-ভদ্র ছোটবড় প্রায় সহস্ৰ লোক লইয়া ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুহিতার্থী বিদ্যালয় ১১ নামে এক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইল। স্কুল স্থাপনের জন্য ৪০ হাজার টাকা মূলধন উঠিয়ছিল এবং স্বনামধন্য পণ্ডিত স্বগীয় ভূদেব মুখোপাধ্যায় ১২ ইহার প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই সময়ে দেবেন্দ্রনাথের পিতৃবিয়োগ হয়। প্রিন্স দ্বারকানাথ ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে বিলাতে একান্ন বৎসর বয়সে দেহত্যাগ করিলেন। পিতার শোক পুত্রের হৃদয়ে অত্যন্ত নির্মমভাবেই বিদ্ধ হইল। তাহা ছাড়া দেখা গেল দ্বারকানাথ প্রচুর ঋণ রাখিয়া গিয়াছেন। দানে তঁহার কুবেরের ভাণ্ডারও একেবারে নিঃশেষ হইয়া গিয়াছিল।

  • বর্তমানে লুপ্ত।