পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSr. বঙ্গ-গৌরব ১৮৯৬-এ ক্যাপ্টেন জে এইচ সেভিয়ার ও মিসেস শার্লট এলিজাবেথ সেভিয়ার দম্পতির সঙ্গে তার পরিচয় হল । তারা অদ্বৈত সত্য উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন। সেভিয়ার দম্পতি তীর অদ্বৈত সত্যকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছিলেন। “বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন এই সত্যের একটি স্থায়ী যজ্ঞকুণ্ড স্থাপিত হােক, সেখান থেকে নিত্যবিচছুরিত হবে আলোক। আদর্শ যজ্ঞস্থলী হিমালয়। অধ্যাত্মিস্বভাবে বিবেকানন্দ সমতলের নন-হিমালয়ের সন্তান। হিমালয়ের অদ্বৈতাকে সমতলের দ্বৈতের মধ্যে স্থাপন করাই ছিল তঁর জীবনব্ৰত।” ১৮৯৬ এর গ্ৰীষ্মে স্বামীজি যখন ইউরোপে, সেভিয়ার দম্পতির সঙ্গে আলপস পর্বতে তুষারভূমিতে বিচরণ করেছিলেন, তখন তীর মন আচ্ছন্ন ছিল হিমালয়ের স্মৃতিতে। স্বামীজি ভেবেছিলেন, জীবনের কাজ যখন শেষ হয়ে যাবে-তখন তিনি চলে যাবেন। হিমালয় আশ্রমে শান্তির মধ্যে, ধ্যানের মধ্যে। তিনি আরও ভেবেছিলেন “এখানে প্ৰাচ্যও পাশ্চাত্য শিষ্যেরা থাকবে একসঙ্গে-তাদের তিনি শিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে দেবেন। তারপর থেকে যাবে এখানকার মানুষের কল্যাণকর্ম সম্পাদনে।” সাত হাজার ফুট উঁচু পাহাড়, আরও কয়েকশো ফুট উঁচুতে আছে একটি সুন্দর অগভীর হ্রদ, সামনে তুষার শৃঙ্গমালা, অসীম নির্জনতা, দীর্ঘ উন্নত দেওদারের গভীর নিশ্বাসে মথিত হয় দিনে রাতে—এমনই স্থানে শ্ৰীরামকৃষ্ণের শুভ জন্মদিনে ১৮৯৯ সালের ২১ মার্চ অদ্বৈত আশ্রম স্থাপিত হােল। জায়গাটির নাম ছিল মায়ী পট, বদলে করা হােল “মায়াবতী। নিকটতম রেলস্টেশন ৬০ মাইল দূরে। (তথ্যসূত্র ঃ শঙ্করীপ্রসাদ বসু: বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ (৫ম) ১৯৮১। পৃ. ৩৩১-৩২) ১২. ব্ৰহ্মবাদিন ঃ স্বামীজির এক সহযোগী, তার বিদেশ গমনের প্রধান উদ্যোক্তা আলসিঙ্গা পেরুমলের সক্রিয় সহযোগিতায় বেদান্তভিত্তিক একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধাস্ত গৃহীত হয়। স্বামীজি মনে মনে এরকম একটি ব্যাপার চেয়েছিলেন। স্বামীজি টাকা সংগ্রহের শুধু প্ৰতিশ্রুতি দিলেন না। আগেভাগে বেশ কিছু টাকা পাঠিয়ে দিলেন।১৮৯৫ এর ৩০ জুলাই এর পত্রে তিনি পত্রিকার নাম ‘ব্ৰহ্মবাদিন” এবং মটাে “একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি” অনুমোদন করে, উৎসাহ দিয়ে লিখলেন ‘সন্ন্যাসীর গীতি’-এইটিই তোমাদের কাগজে আমার প্রথম প্ৰবন্ধ।” অবশেষে ব্ৰহ্মবাদিন’ প্ৰকাশিত হোল ১৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ । তখন এটি পাক্ষিক পত্র। এটি আলসিঙ্গা পেরুমলের সম্পাদনায় প্রকাশিত হলেও সম্পাদনার কাজ করতেন তাঁর ভগ্নীপতি অধ্যাপক এম. রঙ্গাচার্য। ২৪ অক্টোবরের ভিতরে স্বামীজি দুটি সংখ্যা হাতে পেয়ে মন্তব্য করেন ‘বেশ হয়েছে এইরূপ করে চলো। কাগজের কভারটা একটু ভাল করবার চেষ্টা করো, আর সংক্ষিপ্ত সম্পাদকীয় মন্তব্যগুলির ভাষাটা আর একটু হালকা অথচ ভাবগুলি একটু উজ্জ্বল করবাব চেষ্টা করো। গুরুগাষ্ঠীর ভাষা ও হাঁদ কেবল প্রধান প্রধান প্ৰবন্ধগুলোর জন্য রেখে দাও।”