পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর দয়ারসাগর বিদ্যাসাগরের নাম জানে না, বাংলায় এমন লোক কেহ আছে বলিয়া মনে হয় না। বিদ্যাসাগর’ বলিলে যে বিরাট পুরুষের ভাস্বর মূর্তি চক্ষুর সম্মুখে প্রতিভাত হইয় উঠে, সেই প্ৰাতঃস্মরণীয় পুরুষ-সিংহের নাম ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর খাঁটি বাঙালি ছিলেন, প্রকৃত মানুষ ছিলেন—যেমন ভাবুক, তেমনি কর্মী; যেমন দয়ালু, তেমনি দাতা ; যেমন সত্যনিষ্ঠ, তেমনি নিভীক। তাঁহার আত্মমর্যাদা-বােধ যেমন সজাগ ছিল, তিনি তেমনি নিরহঙ্কার ছিলেন। এদিকে প্ৰকাণ্ড পণ্ডিত, কিন্তু সরলতা দেখিলে মনে হইতে যেন বালক। ন্যায়পরায়ণতায় বঞ্জের মত কঠোর, আবার ঔদার্যে কুসুমের মত কোমল। জাতির বহুভাগে দেশে এ-হেন মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে। শতাধিক বর্ষ বাঙালির জীবনে একদিন সেই সৌভাগ্যের উদয় হইয়াছিল। সন ১২২৭ সালের ১২ আশ্বিন মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। হুগলি জেলার বনমালীপুরের ভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যালংকার মহাশয়ের পুত্ৰ রামজয় বিদ্যাভূষণ পিতার মৃত্যুর পর ভ্ৰাতৃবিরোধে বিবাণী হইয়া গৃহত্যাগ করেন। যে ভাইয়ের মুখ দেখিতে চাহে না,-সে যে পরের মেয়ে ভ্ৰাতৃবধুর দিকে তাকাইবে না, সে ত জানা কথা! সুতরাং বিদ্যাভূষণের সন্ন্যাস গ্রহণে পত্নী দুর্গ বড়ই বিপদে পড়িলেন; আপোগণ্ড ছেলেমেয়েগুলি লইয়া তাহার দুঃখকষ্টের আর অবধি রহিল না। সংবাদ বীরসিংহে পৌঁছিল, কন্যার দুরবস্থার কথা শুনিয়া উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয় অস্থির হইয়া উঠিলেন; অচিরে পুত্রকন্যাসহ দুৰ্গা দেবী বীরসিংহে পিত্ৰালয়ে নীত হইলেন। কিন্তু, অদৃষ্টর লিপি কেহ খণ্ডইতে পারে না-পিত্ৰালয়ে আসিয়াও তিনি স্বস্তি লাভ করিতে পরিলেন না, ভরণ-পোষণের ভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া তাহার ভ্রাতৃবধু তীহাকে যখন তখন গঞ্জনা দিতে লাগিলেন। অবস্থা বুঝিয়া তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয় বাটীর নিকটে দুর্গ দেবীর বাসের জন্য একখানি কুটির তুলিয়া দিলেন। দুর্গ দেবী ছেলেমেয়েদের লইয়া ভ্রাতার সঙ্গে পৃথক হইয়া অনেকটা আরাম পাইলেন বটে, কিন্তু চমৎকারা অন্নচিন্তা তাহাকে দিশাহারা করিয়া তুলিল। তবু ত সেকালে অনাথ রমণীদের পরম ভরসাস্থল চরকা ছিল। দুর্গ দেবী অবিশ্রান্ত পরিশ্রমে চরকা কাটিয়া যাহা উপার্জন করিতে লাগিলেন, নিজে কোনো দিন না খাইয়া, কোনো দিন আধাপেট খাইয়া, তাহা হইতেই ছেলেমেয়েদের খাওয়া-পরার সংস্থান জুটাইয়া চলিলেন। দিন কাটিতে লাগিল, কিন্তু জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাস মায়ের কষ্ট দেখিয়া বড়ই চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। বীরসিংহের জগন্মোহন ন্যায়ালংকার*