পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টীকা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য RCBot এই বছর অর্থাৎ ১৮৭৫ এর এগারোই জুন মারা যান। শৰ্মিষ্ঠার ছোট ভাই ফ্রেডরিক মিল্টন। মাত্র ১৩ বছর ১০ মাসে তিনি মারা যান। বিয়ের সময় থেকে অর্থাৎ দু'বছর ৪ মাসের মাঝেই তিনি পিতা, মাতা, স্বামী ও ভাইয়ের মৃত্যু দেখলেন। বিধবা হবার একবছর চার মাস পরে ১৮৭৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ১৮ বছর বয়সে তার বিয়ে হােল উইলিয়াম বেঞ্জামিন নিসের সঙ্গে। উইলিয়াম নিস ছিলেন বিপত্নীক। বয়স ৫২ বছর। আর মাইকেল বেঁচে থাকলে তার বয়স হােত ৫৩ বছর। নিসের সঙ্গে বিয়ের ১ বছর ১ মাস পরে অর্থাৎ ১৮৭৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তঁার একটি ছেলে হয়-নাম রাখা হয়। উইলিয়াম ব্রাইটম্যান স্যামুয়েল নিস। পরের বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি শৰ্মিষ্ঠার দ্বিতীয় সস্তান জন্মায়-নাম রাখা হয় মায়ের মতো হেনরিয়েটা অ্যালাইজা শৰ্মিষ্ঠা নিস -এই বছরই এই কন্যার মৃত্যু হয়। আর কন্যা সন্তানটির মৃত্যুর মাত্র চারদিন পরেই মারা যান। শৰ্মিষ্ঠা স্বয়ং।। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর পাঁচ মাস। ১৯ বছর পাঁচমাসের জীবনে তঁর জীবনে ঘটে দু’বার বিবাহ ও দু’বার গর্ভধারণ। মাইকেল আত্মজার এই পরিণতি আমাদের মনকে বড় নাড়া দেয়। ১৩. রাজা প্ৰতাপচন্দ্ৰ সিংহ (১৮২৭-২৯.৭.১৮৬৬) : পিতা ছিলেন কৃষ্ণসুন্দর ঘোষ। দত্তক পুত্র হিসেবে কলকাতা পাইকপাড়ার সিংহ রাজপরিবারে গৃহীত হন। বাংলার নাট্য আন্দােলনে তিনি ও তার অনুজ ঈশ্বরচন্দ্ৰ সিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত বেলগাছিয়া নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা-এক বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ৩১.৭.১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে রামনারায়ণ তর্করত্ন লিখিত রত্নাবলী” নাটক দিয়ে এই নাট্যশালার উদ্বোধন হয়। রাজ ভ্রাতাদ্বয় ঠিক করেছিলেন, এই নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে বাংলার গভর্নর স্যার ফ্রেডরিক হ্যালিডে সহ ইংরেজ কর্মকর্তা ও অবাঙালি দর্শকদের নিমন্ত্রণ করে দেখাবেন। গীেরদাসের সঙ্গে আলোচনা করে মধুসূদনকে তঁরা এই নাটকটি অনুবাদ করার দায়িত্ব দেন। এই নাটকটি অনুবাদ করে মাইকেল একসঙ্গে পাঁচশো টাকা পেয়েছিলেন। তঁর চাকরি জীবনে একসঙ্গে এতো টাকা তিনি কখনো পাননি। এ ব্যাপারে তিনি রাজাদের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন এবং ১৮৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে যখন শমিষ্ঠা প্ৰকাশ করলেন তখন তা উৎসর্গ করলেন রাজভ্ৰাতাদের নামে। এছাড়া তারা ‘একেই কি বলে সভ্যতা?” ও “বুড় সালিকের ঘাড়ে রো” মাইকেলের এই প্ৰহসন দুটি ছাপানোর খরচ বহন করেছিলেন। ১৪, ঈশ্বরচন্দ্ৰ সিংহ ; পাইকপাড়ার ছোট রাজা। তিনিও বেলগাছিয়া নাট্যশালা’ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত। লোয়ার চিৎপুর রোডে থাকা ও মাদ্রাজ থেকে হেনরিয়েটা আসার পর মাইকেলের খরচ বেড়ে গিয়ে ঋণ হয়ে যায়। মধুসূদনের এই আর্থিক অনটনের কথা রাজাদের দেওয়ান গীেরদাসের অন্যতম বন্ধু শ্ৰীীরাম চট্টোপাধ্যায় জমিদারদের কানে তুলে দেন। অমনি ছোটাে রাজা ঈশ্বরচন্দ্ৰ সিংহ তার বেশির ভাগ ঋণ শোধ করে দিলেন। ইংরেজিতে অনুদিত শৰ্মিষ্ঠা ছাপানের জন্য রাজারা টাকাও ধার দিয়েছিলেন। তবে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচনার শেষ পর্যায়ে কবির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ঈশ্বরচন্দ্ৰ সিংহ মারা যান। ১৮৬১-র ২৯ মার্চ।