পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর vOD সে সময় কলিকাতায় থাকিতেন; তাহার অবস্থাও বেশ সচ্ছল ছিল। ন্যায়ালংকারের পরামর্শমত পনেরো বৎসরের বালক অর্থে পার্জনের আশায় কলিকাতা যাত্রা করিলেন; ন্যায়ালংকার নিজের বাসায় তাহার থাকিবার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। ঠাকুরদাস কলিকাতায় আসিয়া চাকুরির চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু লেখাপড়া ভাল শেখেন নাই; বিশেষত ইংরেজি ত একেবারেই জানেন না। চাকুরি করিতে হইলে এ সব একটু-আধটু জানা দরকার। সুতরাং প্রথমে তিনি কিছু ইংরেজি শিখিতে মনস্থ করিলেন। কিছুদিন ন্যায়ালংকারের বাড়িতে থাকিয়া, পরে ভাগবতচরণ সিংহের ২ আশ্রয়ে নিজে রাধিয়া খাইয়া, অতি কষ্টে সামান্য কিছু ইংরেজি শিখিয়া ঠাকুরদাস মাসে দুই টাকা মাহিনায় একটি চাকুরি লাভ করেন। ভাগবতচরণ দালালি করিতেন; ব্যবসায়ের বাজার নরম হওয়ায় র্তাহার উপার্জন বন্ধ হইয়া যায়; সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরদাসকেও তাহার ফলভাগী হইতে হয়। এই সময় এক একদিন তাঁহাকে উপবাসে কাটাইতে হইত। একদিন ক্ষুধার তাড়নায় বসিয়া থাকিতে না পারিয়া পথে বাহির হইয়া পড়েন, এবং বড়বাজার হইতে ঘুরিতে ঘুরিতে ঠনঠনিয়ায় গিয়া উপস্থিত হন। সেদিন এক মুড়কিওয়ালী তাহার মুখ দেখিয়া দয়াপরবশ হইয়া তাহাকে দই-মুড়কি না খাওয়াইলে তিনি বোধ হয় হাঁটিয়া আর বাসায় ফিরিতে পারিতেন না। যাহা হউক দুই টাকা মাহিনীর চাকুরি পাইয়া তিনি অনেকটা নিশ্চিস্ত হইলেন এবং সেই সংবাদে তাহার জননী যেন হাত বাড়াইয়া স্বৰ্গলাভ করিলেন। সেকালে জিনিষপত্র এত সস্তা ছিল যে, দুই টাকাতেই একটি বৃহৎ পরিবারের ব্যয় সংকুলান হইত। সুতরাং দুই টাকা মাহিনাতেও আনন্দের কারণ যথেষ্টই ছিল। দেখিতে দেখিতে আট বৎসর গত হইয়া গেল, হঠাৎ একদিন রামজয় তর্কভূষণ মহাশয় আসিয়া বীরসিংহে উপস্থিত হইলেন। শুনিতে পাওয়া যায়, সন্ন্যাসাশ্রম পরিত্যাগ করিয়া পুনরায় গৃহধর্ম পালনের জন্য তিনি দেবদেশ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তর্কভূষণ মহাশয় বাড়ি আসিয়া ঠাকুরদাসের বিবাহ দিবার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। গোঘাট গ্রামের রামকান্ত তর্কবাগীশ” শবসাধনা করিতে গিয়া পাগল হইয়াছিলেন ; তাহার পত্নী গঙ্গা দেবী পাগল স্বামী ও দুইটি মেয়ে লইয়া পিত্ৰালয় পাতুলে আসিয়া বাস করেন। তর্কভূষণ মহাশয় রামকাস্তের কনিষ্ঠা কন্যা ভগবতী দেবীর সঙ্গে ঠাকুরদাসের বিবাহ দেন। প্রথম সস্তান-সম্ভাবনার সময় ভগবতী দেবী পাগলের মত হইয়াছিলেন। লোকে মনে করিত এ বংশানুক্রমিক ব্যাধি বোধহয় সারিবে না। নানারূপ চিকিৎসায় কোন ফল না। পাইয়া তর্কভূষণ মহাশয় ভবানন্দ শিরোমণি’ নামক একজন জ্যোতিষীকে আনাইয়া ভগবতী দেবীর কোষ্ঠী-বিচার করেন। শিরোমণি ভবিষ্যদবাণী করিয়াছিলেন, “এঁর গর্ভে মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিবেন এবং প্রসবের পর এ পাগলামির চিহ্নমাত্রও থাকিবে না”। আশ্চর্যের বিষয়, ভবিষ্যদবাণী সত্য হইয়াছিল। পুত্র ঈশ্বরচন্দ্রের জন্মের পরমুহুর্তেই ভগবতী দেবী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করিয়াছিলেন। শিশু ভূমিষ্ঠ হইবামাত্র পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ তাহার জিহ্বার নীচে, আলতা দিয়া কি মন্ত্র ‘লিখিয়া দিলেন; তারপর পুত্র ঠাকুরদাসকে গিয়া বলিলেন, “আমাদের একটা এঁড়ে বাছুর হইয়াছে, ইহার সামনে