পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেশবচন্দ্ৰ সেন ভারতবর্ষের মাটির সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার বীজ মিশিয়া আছে। তাই যুগে যুগে এ দেশে সংস্কারকের দল আবির্ভূত হইয়াছেন। ইউরোপের জলবায়ুর সঙ্গে ভারতবর্ষের জলবায়ুর এইখানেই প্ৰভেদ। পার্থিব উন্নতির পতাকা হাতে লইয়া ইউরোপে কামীর পর কর্ম জয়যাত্রায় বাহির হইয়াছেন। কিন্তু ভারতবর্ষ এই পার্থিব উন্নতির আহ্বানটাকে বরাবরই উপেক্ষা করিয়া চলিয়াছে। এদেশের র্যাহারা শক্তিমান পুরুষ, এই পৃথিবীর সুখদুঃখ, হাসিকান্নার মোত তাহাদের মনে জোয়ার জাগাইয়াছে ভগবানের আহ্বান-আধ্যাত্মিক জীবনের অপার্থিব আনন্দ। কেশবচন্দ্রের জীবন এই ধর্মের আহ্বানেই সাড়া দিয়াছিল। মানুষের আত্মিক উন্নতিকল্পেই তিনি আপনাকে উৎসর্গ করিয়াছিলেন। ইংরেজি ১৮৩৮ অব্দের ১৯ নভেম্বর কেশবচন্দ্ৰ জন্মগ্রহণ করেন। যে পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, সেই সেন পরিবারের খ্যাতি ও প্রতিপত্তি তখন সারা বাংলায় ছড়াইয়া পড়িয়াছে। তঁহার পিতামহ রামকমল সেনের* উৎসাহ, বুদ্ধি ও পরিশ্রমে একদিকে সাংসারিক উন্নতি যেমন কুল ছাপাইয়া উঠিয়াছিল, অন্যদিকে আবার তেমনি তাহার সৎস্বভাব, ধর্মনিষ্ঠা ও ভগবদভক্তিতে সেন-সংসার পুণ্যের আলোকে উদভাসিত হইয়াছিল। রামকমল গোড়া বৈষ্ণব ছিলেন। দান-ধ্যান, অতিথি-সৎকার, দরিদ্র-সেবা ত তাহার নিত্য-নৈমিত্তিক কার্য ছিলই ; উপরন্তু নাম-গানে, হরি-সংকীর্তনেও তাহার গৃহ সর্বদা মুখরিত থাকিত। এই আবেষ্টনের ভিতর জন্মগ্রহণ করিয়া কেশবচন্দ্ৰ শৈশব হইতেই ধর্মানুরাগী হইয়া উঠেন। উত্তর জীবনে এই ধর্মানুরাগই তঁহাকে নতুন পথে লইয়া গিয়াছিল এবং ব্ৰাহ্মধর্মের ভিতর নবজীবনের প্রতিষ্ঠা করা তাহার পক্ষে অসম্ভব হয় নাই। কেশবচন্দ্রের পিতার নাম ছিল প্যারীমোহন সেন। তাহার পিতার ভিতরেও পিতামহের মতই ধর্মভাব প্ৰবল ছিল এবং তঁহত্ত্বর মাতাও নানা সদগুণের আধার, আদর্শ রমণী ছিলেন। সুতরাং বাড়ির আবহাওয়া যে তঁহার ধর্ম-জীবনের বিকাশের পক্ষে বিশেষ অনুকুল ছিল, তাহা বলাই বাহুল্য। আড়াই বৎসরের শিশু কেশবচন্দ্রের কতকগুলি লক্ষণ দেখিয়া তাহার পিতামহ রামকমল সেন বলিয়াছিলেন-“এই শিশু আমার বংশের গৌরব হইবে। ইহার জন্মে আমার কুল উজ্জ্বল ও বংশ পবিত্র ও ধন্য হইয়াছে।” তাহার ভবিষ্যদবাণী যে ব্যর্থ হয় নাই, কেশবচন্দ্রের উত্তর জীবনের ভিতর দিয়াই তাহার পরিচয় স্পষ্ট হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে। বাল্যকাল হইতেই কেশবচন্দ্রের প্রকৃতিতে চাঞ্চল্য ছিল না। যে বয়সে ছেলেরা খেলাধুলা ছাড়া আর কিছু করে না, সে বয়সেও তঁহাকে চুপ করিয়া এক স্থানে গভীরভাবে a ܓܚܝܗܹܗܸܕ݂7#2ܛrܗ