পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেশবচন্দ্ৰ সেন & হইয়া পড়িয়াছিলেন, তখন র্তাহার পরিবারের লোকেরা তাহাকে আবার গৃহে ফিরাইয়া আনিয়াছিলেন। কিন্তু বাড়িতে ফিরিয়াও তিনি ব্ৰাহ্মধর্মের আদর্শ হইতে তিলমাত্র বিচুত হন নাই। এই বৈষ্ণবের বাড়িতেও তিনি পুত্রের জাতকর্ম ব্ৰাহ্মধর্মের নিয়ম অনুসারেই সম্পন্ন করাইয়াছিলেন। ব্ৰাহ্মধর্মের প্রচারের জন্য কেশবচন্দ্ৰ সমগ্ৰ ভারত, এমন কি বিলাত পর্যন্ত, ভ্ৰমণ করিয়াছেন। তঁহার বক্তৃতা এত হৃদয়গ্রাহী ছিল যে, শ্রোতারা মন্ত্ৰমুগ্ধবৎ হইয়া যাইত। ব্ৰাহ্মধর্মের ভক্তের সংখ্যা তাহার সময়েই সর্বাপেক্ষা বাড়িয়া উঠে। গভর্নর জেনারেল সম্মান করিতেন, শ্রদ্ধা করিতেন। তঁহার বাগিতাও বহুলোককে তঁহার প্রতি অনুরক্ত করিয়াছিল। এই বাগ্নিতার জোরেই তিনি ইংল্যান্ডেও অসাধারণ প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। মহাপণ্ডিত মোক্ষমূলর,* জন স্টুয়ার্ট মিল,* নিউম্যান,** গ্লাডস্টোন, ১২ ডিন স্টানলী** প্রভৃতি ইংল্যান্ডের বিরাট পুরুষেরাও তাঁহাকে অন্তরের শ্ৰীতি ও আনন্দ দিয়া অভিনন্দন করিয়াছিলেন। মহারাণী ভিক্টেরিয়াও** তাহাকে রাজপ্রাসাদে নিমন্ত্রণ করেন এবং তঁহার সহিত পরিচিত হইয়া বিশেষ প্রীতি লাভ করেন। মহারাণী কেশবচন্দ্ৰকে তাহার নিজের একখানি চিত্ৰপট ও স্বামীর দুইখানি জীবনী উপহার দিয়াছিলেন। ইংল্যান্ডে কেশবচন্দ্র ধর্মবিষয়ে তা বক্তৃতা দিয়াছিলেনই, তাহা ছাড়া ইংরেজদের মদ্য ব্যবসায়ের দোষ দেখাইয়া ও ভারতবর্ষে ইংরেজদের শাসনের স্বরূপ বর্ণনা করিয়াও তিনি বক্তৃতা দেন। ইংল্যান্ডে কেশবচন্দ্ৰ যে সম্মান লাভ করিয়াছিলেন, আর কোন বাঙালির ভাগ্যে তাহা ঘটিয়াছে কি না সন্দেহ। কেশবচন্দ্ৰেয় প্রত্যাবর্তনের পর বিলাতে একটি ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল। তিনি যে সেখানে কিরূপ সাফল্য লাভ করিয়াছিলেন, তাহার পরিচয় ইহা হইতেই পাওয়া যায়। কতকগুলি ক্রিয়াকলাপ আচার-পদ্ধতি লইয়া মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সহিত কেশবচন্দ্রের মতভেদ হওয়ায় তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পর্ক ত্যাগ করেন। ইহারই ফলে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতবষীয় ব্রাহ্মসমাজ নামে এক নূতন সমাজ স্থাপিত হয়। কিন্তু যে মতভেদের সৃষ্টি হইয়াছিল, এইখানেই তাহার শেষ হয় নাই। কুচবিহারের মহারাজার** সহিত তাহার অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যার ১৬ বিবাহ প্ৰদান প্রভৃতি ব্যাপার লইয়া আরও কতকগুলি মতভেদের সৃষ্টি হওয়াতে ভারতবষীয় ব্রাহ্মসমাজও দীর্ঘদিন স্থায়ী হইতে পারিল না। ইহার পরেই নূতন লোকেরা “সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ” নামে একটি স্বতন্ত্র ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত করিলেন। কেশবচন্দ্রও তাহার সমাজের ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ” নাম তুলিয়া দিয়া নূতন নাম রাখিলেন “নববিধান সমাজ।” লোকহিতকর বহু ব্যাপারের সহিত কেশবচন্দ্রের অন্তরের সুগভীর যোগ ছিল। তিনি মদ্যপান প্রথা রহিত করিবার জন্য প্ৰাণপণে চেষ্টা করিয়াছিলেন। এজন্য তিনি বহু বক্তৃতা করিয়াছিলেন, প্ৰবন্ধ লিখিয়াছিলেন, সভা সমিতির প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। নারী শিক্ষার জন্যও তাহার অসাধারণ আগ্রহ ছিল। ভিক্টেরিয়া কলেজ’। তাহারই উদ্যম ও অধ্যবসায়ে