পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vo বঙ্গ-গৌরব এই কথা গৃহমধ্য হইতে শুনিবা মাত্র কৃষ্ণদাস তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া বলিলেন, “সাহেব, উনি আমার পিতৃদেব। আপনার ঘোড়ার লাগাম আমি ধরিতেছি।” এই কথা শুনিয়া সাহেব বড়ই অপ্রস্তুত হইলেন এবং কৃষ্ণদাস ও তঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। কৃষ্ণদাসের সম্বন্ধে এরূপ গল্প আছে। কৃষ্ণদাসের পরলোকগমনের পর তঁহার স্মৃতিরক্ষার জন্য কলিকাতা হ্যারিসন রোড ও কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গমস্থলে তাহার গুণমুগ্ধ স্বদেশবাসীগণ র্তাহার একটি মর্মীর-মুর্তি প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন এবং প্রতি বৎসর তঁহার পরলোকগমনের দিবসে একটি স্মৃতিসভার অধিবেশন হইয়া থাকে । হাজি মহম্মদ মহসীন প্রায় দুইশত বৎসর পূর্বে গঙ্গাতীরবর্তী হুগলি নগরী ব্যবসায় ও বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র এবং শ্রেষ্ঠ বন্দর ছিল। সেই সূত্রে দেশ হইতে নানা শ্রেণির বণিকগণ আসিয়া এখানে বাস করিতেন। এইরূপ ব্যবসায়-বাণিজ্য উপলক্ষ করিয়াই অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আগ ফয়জুল্লা নামক জনৈক পারসাদেশীয় সম্রাস্ত বণিক হুগলিতে আসিয়া বসবাস করিতে আরম্ভ করেন। আগা ফয়জুল্লার পুত্ৰ হাজি ফয়জুল্লাও পিতার সঙ্গে হুগলিতে আসিয়াছিলেন। এবং পিতার সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া তাহার কারবারে সাহায্য করিতেন। ক্ৰমে কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় অধ্যবসায়ের ফলে অত্যাক্স কালের মধ্যেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করিয়া হাজি ফয়জুল্লা একজন ধনশালী বণিকরাপে সুপরিচিত হইয়া উঠেন। এই সময়ে ভারতের তদানীন্তন সম্রাট বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের দরবারে আগা মতােহর নামে পারস্য দেশের অন্য একজন সভ্রান্ত ঘণিক কৰ্ম করিতেন। চরিত্রগুণে তিনি সম্রাটের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হইয়া উঠেন এবং তঁহার তুষ্টিসাধন করিয়া তাহার নিকট হইতে যশোহর, খুলনা প্রভৃতি বঙ্গদেশের কয়েকটি ভাল ভাল স্থান জায়গির প্রাপ্ত হন। অতঃপর দরবারের কর্ম পরিত্যাগ করিয়া তিনি হুগলিতে আসিয়া উপনীত হন এবং সেইখানে ঘরবাড়ি করিয়া বাস করিতে থাকেন। এইরূপে তিনিও এদেশের মধ্যে একজন গণ্যমান্য লোক বলিয়া খ্যাতিলাভ করেন। আগা মতাহরের একটি মাত্র কন্যা ছিল—তাহার নাম মনুজন। এই মানুজন ভিন্ন মতাহরের আর কোন সস্তান ছিল না। যথাকলে আগা মতাহরের মৃত্যু হইলে এই মন্ধুজনই তঁহার বিপুল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারিণী হইলেন। স্বামীর মৃত্যুতে আগা মতাহরের পত্নীও আর কন্যার ঐশ্বর্যের উপর নির্ভর করিয়া থাকিতে পারিলেন না।