পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণদাস পাল SS থাকে। রাজা রাধাকান্ত দেব, রাজা দিগম্বর মিত্র,১.২ প্রসন্নকুমার ঠাকুর” প্রভৃতি বড় বড় জমিদারগণের চেষ্টায় কৃষ্ণদাস এই সভার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হইলেন। তখন র্তাহার বয়স কুড়ি বৎসর মাত্র। এই কার্য তিনি এমন যোগ্যতার সহিত সম্পাদন করিতে লাগিলেন যে, কিছু দিন পরে তিনি ৩৫০ টাকা বেতনে উক্ত সভার সম্পাদক নিযুক্ত হইলেন। সেই সময় জমিদারগণের পক্ষ হইতে তিনি যে সকল পত্ৰাদি লিখিতেন এবং অভিমত প্ৰকাশ করিতেন, তাহাতে র্তাহার প্রগাঢ় রাজনীতি-জ্ঞান এবং ভাষায় অনন্যসাধারণ পারদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। অবশেষে এমন অবস্থা হইল যে, কৃষ্ণদাসই ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের’র সর্বেসর্বা, বলিতে গেলে, কর্ণধার হইয়া উঠিলেন। ইহা সাধারণ গৌরবের বিষয় নহে। ১৮৫৮ অব্দে কুড়ি বৎসর বয়সে কৃষ্ণদাস ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনে’ কার্য গ্রহণ করেন। তাহার পর তিন বৎসর যাইতে না যাইতেই পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর মহাশয় কৃষ্ণদাসের উপর তৎকালের বাঙালি-পরিচালিত সুপ্ৰসিদ্ধ সংবাদপত্র হিন্দু পেট্রিয়টের’র** সম্পাদন ভার ন্যস্ত করিলেন। প্ৰসিদ্ধ দেশ-হিতৈষী মহাত্মা হরিশ্চন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায় ১৫ মহাশয় এই ‘হিন্দু প্যাট্রিয়টে”র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তঁহার সম্পাদকতায় “প্যাট্রিয়ট” তখন সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বজনমান্য সংবাদপত্র হইয়াছিল। হরিশ্চন্দ্রের অকালমৃত্যুর পর স্বগীয় কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয় উহা ক্রয় করেন এবং প্রসিদ্ধ লেখক শম্ভুচন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায়কে সম্পাদক নিযুক্ত করেন। কিন্তু এ ব্যবস্থাতেও উহা ভালরূপে না চলায় কালীপ্রসন্ন” সিংহ মহাশয় কাগজের সমস্ত ভার বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উপর প্রদান করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় কৃষ্ণদাসকেই সর্বাংশে উপযুক্ত মনে করিয়া তঁহাকে “হিন্দু প্যাট্রিয়টে”র সম্পাদক নিযুক্ত করেন এবং কিছুদিন পরে এই পত্রিকাখনি একপ্রকার কৃষ্ণদাসেরই হইয়া যায়। এই পত্রিকাখনি হইতে কৃষ্ণদাস বৎসরে অনেক টাকা আয় করিতেন। কৃষ্ণদাস পালের নাম তখন দেশবিখ্যাত হইল। সকলেই তাহাকে যথেষ্ট সম্মান করিত। ১৮৭২ অব্দে কৃষ্ণদাস বঙ্গের ছোটলাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য মনোনীত হন এবং ১৮৮৩ অব্দে তিনি বড়লাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন। ইতঃপূর্বেই ১৮৭৭ অব্দে কৃষ্ণদাস “রায় বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন এবং পরবতী বৎসরে তিনি সি-আইই উপাধি ভূষিত হন। কৃষ্ণদাসের মহত্ত্ব ও অমায়িকতা সম্বন্ধে অনেক গল্প আছে; তাহার মধ্যে একটি গল্প বলিয়াই এই মহাত্মার জীবনকথা শেষ করিব। একদিন কৃষ্ণদাস র্তাহার বৈঠকখানায় বসিয়া কাৰ্য করিতেছিলেন। তঁহার বৃদ্ধ পিতা সামান্য একখানি আট-হাতি মলিন বস্ত্ৰ পরিধান বাহিরের প্রাঙ্গণের ঘাস পরিষ্কার করিতেছিলেন ; এমন সময় একজন উচ্চপদস্থ ইংরেজ কৃষ্ণদাসের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য অশ্বারোহণে র্তাহার গৃহে উপস্থিত হইলেন এবং বাহিরের প্রাঙ্গণে বৃদ্ধ ঈশ্বরচন্দ্ৰকে ঐ অবস্থায় দেখিয়া তাঁহাকে ভৃত্য মনে করিয়া আদেশ করিলেন, ‘ঘোড়া পাকুড়াও”।