পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গ-গৌরব যাইত। পেটের পীড়ায় দুই বৎসর কাল ভুগিয়াও তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু পড়াশুনার দিকে ঝোক থাকিলেও নরেন্দ্ৰনাথ দেহটাকে উপেক্ষা করেন নাই। তাহার শরীর রীতিমত শক্তিশালী ছিল। সঙ্গীতবিদ্যাও তিনি ভাল রকমই শিক্ষা করিয়াছিলেন। কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদের সভাসমিতিতে বক্তৃতা করার ফলে বক্তৃতা দিবার ক্ষমতাও তাঁহার ভিতর অদ্ভুতভাবে বিকাশ লাভ করে। নরেন্দ্রের পণ্ডিত্য ও সাহস যে কত বেশি ছিল, একটি ব্যাপারে তাহার পরিচয় পাওয়া যায়। হার্বটি স্পেন্সারের* নাম সমগ্ৰ ইউরোপে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। নরেন্দ্র তখন এফএ ক্লাসের ছাত্র মাত্র। সেই বয়সেই তিনি স্পেন্সারের মত বিশ্ববিশ্রুত পণ্ডিতকেও তাহার একটি নূতন মতের প্রতিবাদ করিয়া পত্র লিখিয়ছিলেন। সেই পত্রে তিনি যে চিন্তাশীলতার পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহাতে স্পেন্সার সাহেব মুগ্ধ হইয়া যান। তিনি নরেন্দ্রকে সত্যনির্ণয়ের জন্য উৎসাহ দিয়া একখানি পত্র লিখিয়াছিলেন। এই সময়েই ধর্মের দিকে নরেন্দ্রের মন আকৃষ্ট হয়। তিনি প্রথমে ব্রাহ্মসমাজে যাতায়াত আরম্ভ করেন; কিন্তু ব্ৰাহ্মধর্ম তাহার মনের ক্ষুধা মিটাইতে পারিল না। ইংরেজি দর্শনশাস্ত্ৰ পড়িতে পড়িতে তিনি ক্রমেই নাস্তিক হইয়া উঠিতে লাগিলেন। ইহার কিছুদিন পরে পরমহংস রামকৃষ্ণদেবের সহিত নরেন্দ্রনাথের পরিচয় হইল। পরমহংসদেব নরেন্দ্ৰকে দেখিয়াই বলিলেন—“এ ত নিত্যসিদ্ধ পুরুষ’। পরমহংসদেব প্ৰথমে কিন্তু নরেন্দ্ৰকে আকর্ষণ করিতে পারিলেন না। নরেন্দ্রনাথের বয়স তখন ২১ বৎসর। তিনি জেনারেল এসেমরী কলেজ হইতে বি-এ পাশ করিয়াছিলেন। তঁহার পিতা বিশ্বনাথ অ্যাটর্নি ছিলেন। তিনি পুত্ৰকে আইনের কলেজে ভরতি করিয়া দিলেন। কিন্তু এবার পড়াশুনা নরেন্দ্রনাথকে আর ধরিয়া রাখিতে পারিল না। ভগবানকে প্রত্যক্ষ করিবার জন্য তখন তাহার মন পাগল হইয়া উঠিল। তিনি হঠাৎ একদিন পরমহংসদেবের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেন-“আচ্ছ। আপনি ত অনেক কথা বলেন ; আপনি ঈশ্বরকে দেখিয়াছেন ?” রামকৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন—“হাঁ দেখিয়াছি, তুই যেমন আমার কাছে দাঁড়াইয়া আছিস তোকে যেমন আমি দেখিতেছি, তেমনি তাকেও আমি দেখিতে পাই। কেবল যে আমিই র্তাকে দেখিতে পাই তাহা নহে, তোকেও দেখাইতে পারি।” শুনিয়া নরেন্দ্ৰনাথ স্তম্ভিত হইয়া গেলেন। এত বড় স্পর্ধার কথা ইতিপূর্বে আর কেহ তঁহাকে বলিতে পারে न्छ। এই সময় তাহার পিতা তাহার বিবাহ দিবার বহু চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু সন্ন্যাস যাহাকে টানিয়াছে, ঘরে তাহার মন বসিতে পারে না। নরেন্দ্ৰনাথ বিবাহ করিলেন না। কিছুদিন পরে পিতার মৃত্যু হইল; তিনিও আইনবিদ্যালয় পরিত্যাগ করিয়া রামকৃষ্ণের নিকট চলিয়া গেলেন। পরমহংসদেবের পদমূলে বসিয়াই নরেন্দ্রনাথের সাধনা আরম্ভ হয়। রামকৃষ্ণ নিজে