পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী বিবেকানন্দ স্বামী বিবেকানন্দের জীবন উনচল্লিশটি বৎসরের সমষ্টিমাত্র। এই ক্ষুদ্র জীবনকালে তিনি যাহা করিয়া গিয়াছেন, শত বৎসরের সুদীর্ঘ জীবনে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি তাহা করিতে সমর্থ হন নাই। তাহার জীবন উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্কের মত। অন্ধকার ঘেরা ভারতের এক প্রাস্তে অকস্মাৎ তাহার বিকাশ হইয়াছিল; তারপর অভিনব দীপ্তিতে সমস্ত পৃথিবী আলোকিত করিয়া তিনি অস্তহিত হইয়াছেন। বিবেকানন্দের পিতার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত, মাতার নাম ছিল ভুবনেশ্বরী। ইহারা উভয়েই অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন; কিন্তু দীর্ঘদিন পুত্র না হওয়ায় তঁহাদের মনে শক্তি ছিল না। পুত্রের জন্য ভুবনেশ্বরী অনেক দেবতার নিকট আরাধনা করেন। অবশেষে কাশীতে বিশ্বেশ্বরের কাছে মনের কামনা যখন জানাইয়া আসিলেন, তাহার পরেই ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বিবেকানন্দের জন্ম হয়। এই জন্যই মাতা পুত্রের নাম রাখিয়াছিলেন বীরেশ্বর। কিন্তু তাহার আসল নাম ছিল নরেন্দ্ৰনাথ । পুত্রের সম্বন্ধে পিতা অতিমাত্রায় উদার ছিলেন। কখনও নরেন্দ্রনাথকে তিনি তিরস্কার বা শাসন করিতেন না। ফলে, জীবনের প্রথমেই স্বাধীনতার আস্বাদ লাভ করেন। এই স্বাধীনতাই তঁহার মনকে নূতন ভাবে নূতন রূপে গড়িয়া উঠিবার সুযোগ দান করিয়াছিল। বিবেকানন্দের বাল্যের ধুলা খেলার ভিতরেও অসাধারণত্বের ছাপ ছিল। ছেলেদের লইয়া তিনি চোখ বুজিয়া ধ্যানে বসিয়া খেলা করিতেন। সেই শিশু বয়সেও ধ্যানের খেলা খেলিতে খেলিতে তিনি একেবারে তন্ময় হইয়া পড়িতেন। একবার একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। ছাতে যেখানে নরেন্দ্রনাথ সঙ্গীদের লইয়া খেলা খেলিতেছিলেন, সেইখানে আকস্মাৎ একটি সাপের আবির্ভাব হয়। সঙ্গী বালকেরা সাপ দেখিয়া যে যার মত চিৎকার করিয়া পলাইয়া গেল। কিন্তু নরেন্দ্ৰনাথ পলাইলেন না।--তখন তিনি ধ্যানে তন্ময়। বাড়ির লোক চিৎকার শুনিয়া ছাতে আসিয়া যাহা দেখিল, তাহা অপূর্ব। নরেন্দ্রনাথ ধ্যানন্থের মত বসিয়া আছে এবং সাপটি তাহার মাথার উপর ফণা মেলিয়া দাঁড়াইয়া আছে। লোকের সমাগম হইতেই সাপটি ফণা গুটিাইয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। এই ঘটনার পর আত্মীয়স্বজনের আর সন্দেহ রহিল না যে, এই বালক উত্তর জীবনে একজন মহাপুরুষ হইবেন। নরেন্দ্রনাথের পড়াশুনার দিকেও অসাধারণ ঝোঁক ছিল। শিক্ষক পড়া বলিয়া দিতেন; পাছে অন্য কোন বিষয়ে মন যায়, তাই তিনি চোখ বুজিয়া তাহা শ্ৰবণ করিতেন। তঁহার অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল। শিক্ষকের কথাগুলি একেবারে তঁহার হৃদয়ের সঙ্গে গাঁথিয়া