পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত SV মাদ্রাজে যাওয়ার কয়েক বৎসর পরে তঁহার মাতৃবিয়োগ হয় এবং সাত বৎসর পরে তঁহার পিতা স্বৰ্গারোহণ করেন। তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে লাগিলেন, আর তঁহার পিতার বিষয় জ্ঞাতি-শত্রুরা লুঠিয়া খাইতে লাগিল। অবস্থা যখন এইরূপ, সেই সময় কোন বন্ধুর অনুরোধে তিনি দেশে ফিরিয়া আসেন। সে বোধ হয় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসের কথা। মাইকেল দেশে ফিরিলেন বটে, কিন্তু জ্ঞাতিরা তঁহাকে সম্পত্তি দখল দিল না। তিনি প্রিয় বন্ধু গীেরদাস বসাকের যত্নে পুলিশ আদালতে একটি কেরানিগিরি চাকুরি লাভ করিলেন। কিছুদিন পরে ঐ আদালতেই দোভাষীর কার্যে নিযুক্ত হইয়া তিনি কলিকাতায় থাকিয়া পৈতৃক বিষয় উদ্ধারের চেষ্টা করিতে লাগিলেন। এই সময় পাইকপাড়ার রাজা প্রতাপচন্দ্ৰ’’ ও রাজভ্ৰাতা ঈশ্বরচন্দ্ৰ সিংহ** জোড়াসাঁকোর মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর** মহাভারত-অনুবাদক বিখ্যাত কালীপ্রসন্ন সিংহ** প্রভৃতি মিলিয়া সিংহরাজাদের বেলগেছিয়ার বাগানে একটি রঙ্গমঞ্চ প্ৰস্তুত করিয়া ব্ৰত্নাবলী নাটক অভিনয় করেন। নাটক সংস্কৃতে লেখা; সকলে বুঝিতে পারিলেন না। তাই মাইকেলকে দিয়া আঁহারা রত্নাবলীর একটি ইংরেজি অনুবাদ করাইয়া লন। এই অনুবাদ এত সুন্দর হইয়াছিল যে, প্রতাপচন্দ্ৰ ও ঈশ্বরচন্দ্ৰ আনন্দিত হইয়া মাইকেলকে পাঁচশত টাকা পুরস্কার দান করেন। ইহার পর বাংলা নাটক অভিনয়ের কথা উঠিলে তঁহারা মধুসূদনকেই নাটক লিখিবার ভার দেন। মাইকেল শমিষ্ঠা’** নাটক লিখিয়া দেন। বাংলায় তখন প্ৰহসন ছিল না, মাইকেল একেই কি বলে সভ্যতা” ও “বুড় সালিকের ঘাড়ে রে’** নামে দুই খানি প্রহসন লিখিয়া বাংলা ভাষায় প্রহসন রচনার সূত্রপাত করিয়া দেন। র্তাহার রচিত অপর নাটক ‘পদ্মাবতী”২০ ও বেলগেছিয়ায় অভিনয়ের জন্যই লিখিত হইয়াছিল। মধুসূদনের তিলোত্তম সম্ভব”** ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে এবং তঁহার অমর কাব্য 'মেঘনাদবধ’ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে লিখিত হইয়াছিল। কৃষ্ণকুমারী’ নাটক’, ২২ 'ব্ৰজাঙ্গনা’,২৩ ‘বীরাঙ্গনা”২৪ তাহার পরের লেখা। এই সমস্ত নাটক ও কাব্য তঁহাকে বাংলা সাহিত্য-ক্ষেত্রে মহাকবি রূপে পরিচিত করিয়াছে। পুস্তকের আয় হইতে র্তাহার সমস্ত দেনা-শোধ হইয়া যায়। মোকদ্দমা করিয়া তিনি পিতৃ-সম্পত্তিও ফিরিয়া পান। এই সময়ে তাহার একটি ছেলে ও মেয়ে হইয়াছিল, বলিতে গেলে এই সময়ের তাহার জীবনে তিনি সমধিক সুখী হইয়াছিলেন। কিন্তু হইলে কি হয় ; আশৈশব বিলাসের কোলে ললিত হইয়া আত্ম-নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাহার লোপ পাইয়াছিল। প্রকৃতি উচ্ছঙ্খল, খরচের হিসাব-নিকাশ নাই, সুতরাং অর্থকষ্ট তাহার লাগিয়াই ছিল, তিনি তিলার্ধের জন্যও শাস্তি পাইতেন না। সেইজন্য অধিক অর্থ উপার্জনের প্রত্যাশায় মাইকেল বিলাত হইতে ব্যারিস্টার হইয়া আসিবার সংকল্প করিলেন। সংকল্প কাৰ্য্যে পরিণত করিতে বিলম্ব ঘটিল না। বিষয় সম্পত্তি বন্দোবস্ত করিয়া, পুত্ৰ কন্যা ও স্ত্রীকে এদেশে রাখিয়া, ইংরেজি ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন তিনি বিলাত যাত্ৰা করিলেন। এই বিলাত গমনই তাহার কাল হইল। যাঁহার উপর সম্পত্তির ভার দিয়া গিয়াছিলেন, সেই মহাদেব চট্টোপাধ্যায় মহাশয় তাহার সম্পত্তি ভোগ করিতে লাগিলেন। বিলাতে