পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বঙ্গ-গৌরব টাকা পাঠান ত দুরের কথা চট্টোপাধ্যায় মাইকেলের পত্নীকেও একটি পয়সা দিতেন না। ওদিকে বিলাতে যখন মাইকেলের আপাদমস্তক দেনায় ডুবিয়া গিয়াছে, তখন তঁহার নিরুপায় পত্নী পুত্রকন্যা লইয়া বিলাতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। যাঁহার নিজের খরচ চলে না, তাহার এতগুলি পোষ্য! কিন্তু আর ত ধারা পাওয়া যায় না! মাইকেল আবার বিপদে পড়িলেন। শেষে অবস্থা এমনি দাঁড়াইল যে, তাহাকে বা জেলে যাইতে হয়। দুৰ্দশা যখন এমনই চরমে গিয়া পৌঁছিয়াছে, সেই সময় দয়ার সাগর বিদ্যাসাগরকে সব কথা জানাইয়া চিঠি লেখায় তিনি মাইকেলকে দেড় হাজার টাকা পাঠাইয়া দেন। পরে বিদ্যাসাগর আবার টাকা পঠাইয়াছিলেন। ইং ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে মাইকেল ব্যারিস্টার হইয়া দেশে ফিরিয়া আসেন। কবি দেশে ফিরিলেন, দেশের লোক খুব ঘটা করিয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করিল। এদিকে ঠিক করিয়া রাখিয়ছিলেন। সুতরাং কবির পসার জমিতে বিলম্ব হইল না। কিছুদিন বেশ স্বচ্ছন্দে কাটিল। তাহার পর আবার শনির দশা আরম্ভ হইল; ভাগ্য পরিবর্তন হইল। আয় কমিল, খরচ সমানই রহিয়া গেল; শেষে দেনা বাড়িতে বাড়িতে এমন দাঁড়াইল যে, অবস্থা শোচনীয় হইয়া উঠিল। কবি পাওনাদারদের জুলায় অস্থির হইয়া মদের মাত্রা বাড়াইয়া দিলেন, দিনরাত্ৰি মদে ডুবিয়া থাকিতে চেষ্টা করিতে লাগলেন। এই সময় তিনি কঠিন পীড়ায় শয্যাগত হইয়া পড়েন। এই অবস্থাতেও কিছু টাকা পাইয়া তিনি ‘বেঙ্গল থিয়েটারকে” ২৫ মায়াকানন”২৬। লিখিয়া দিয়াছিলেন। এদিকে তঁহার এই পীড়া, ওদিকে র্তাহার পত্নী হেনরিয়েটাও মরণাপন্না। বন্ধু-বান্ধবেরা হেনরিয়েটাকে তঁহার মেয়ের বাড়িতে এবং কবিকে আলিপুর দাতব্য চিকিৎসালয়ে পাঠাইয়া দিয়া কৰ্তব্য শেষ করিলেন। পত্নীর মৃত্যুর তিনদিন পরে ইংরাজি ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুন রবিবার বেলা দুইটার সময় ঐ দাতব্য চিকিৎসালয়েই তিনি অস্তিম নিঃশ্বাস পরিত্যাগ করেন। মাইকেলের এই দুর্দশার জন্য তিনি নিজে এবং তাহার দেশবাসী কে কতটুকু অপরাধী তাহার বিচার অন্তর্যামী করিবেন। কিন্তু বাঙালির এ কলঙ্ক কখনও ঘুচিবে না যে, তাহাদের কবি দাতব্য চিকিৎসালয়ে দেহত্যাগ করিয়াছেন। মাইকেল শুধু নূতন ছন্দের প্রবর্তক নহেন, বাংলা কাব্য রচনায় তিনি নুতন ভাব ও নুতন ভাষারও প্রবর্তন করিয়াছেন। নাট্যকার এবং প্রহসন রচয়িতা বলিয়াও র্তাহার নাম চিরস্মরণীয় হইয়া রহিবে। মানুষ যে ইচ্ছা করিলে স্বর্গের দেবতা হইতে পারে, আবার উচ্ছঙ্খলতার পথও সুগম করিতে পারে, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাহার সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।