পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89 বঙ্গ-গৌরব মথুরা হইতে ফিরিবার পথে মোগলসরাই স্টেশনে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত আশুতোয্যের পরিচয় হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় বালকের কথাবার্তায় এত মুগ্ধ হইয়াছিলেন যে, সেই পথের দেখা তিনি বিস্মৃত হইতে পারেন নাই। পরে যখন থ্যাকার স্পিঙ্ক কোম্পানির পুস্তকের দোকানে আবার দুইজনের সাক্ষাৎ হইয়াছিল, তখন বিদ্যাসাগর মহাশয় একখানা ‘রবিনসন ক্রুশো’ কিনিয়া আশুতোষকে উপহার দিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই উপহারের বইখানি এখনও আশুতোষের পুস্তকাগারে শোভা পাইতেছে। মথুরা হইতে প্ৰত্যাগমনের পর তীহাকে ভবানীপুর সাউথ সুবারবন স্কুলে ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীই তখন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাংলার এই মনীষীর কাছে আশুতোষের শিক্ষা আবার নূতন করিয়া আরম্ভ হইল। শিক্ষক এবং ছাত্র পরস্পর পরস্পরকে লাভ করিয়া ধন্য হইলেন। পুত্রকে পড়াশুনায় উৎসাহ দিবার জন্য গঙ্গাপ্রসাদ ব্যবস্থা করিয়াছিলেন-ক্লাসে আশুতোষ যতদিন প্ৰথম থাকিবেন, প্রতিদিন এক টাকা করিয়া এবং যতদিন দ্বিতীয় থাকিবেন প্রতিদিন আট আনা করিয়া পুরস্কার পাইবেন। আশুতোষ ছাত্র-জীবনে কোন দিন এই আট আনার পুরস্কার লাভ করেন নাই,--তিনি প্রথম স্থানে সুপ্রতিষ্ঠ হইয়া প্রত্যহই এক টাকা পুরস্কার পাইতেন। আশুতোষের ছাত্র-জীবন অদ্ভুত। তিনি যখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, তখন র্তাহার মিল্টনের “প্যারাডাইস লস্ট ৩ প্রথম খণ্ড, লর্ড মেকলের ‘হেষ্টিংস’ষ্ট ও ক্লাইবের’* জীবনী পাঠ শেষ হইয়া গিয়াছিল। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়িবার সময় ‘বার্কের প্রবন্ধাবলি”৬ তিনি পড়িয়া শেষ করিয়াছিলেন। জ্যামিতির চারি খণ্ড ত চতুর্থ শ্রেণিতেই শেষ হইয়া গিয়াছিল। প্ৰবেশিক পরীক্ষায় আশুতোষ দ্বিতীয় স্থান লাভ করিয়াছিলেন। কলেজে প্রবেশ করিয়া আশুতোষের লেখাপড়ার বেঁকে আরও বাড়িয়া যায়। এক মুহুৰ্তও তিনি সময়ের অপব্যয় করিতেন না। লাইব্রেরিতেই তাহার অবসর সময় কাটিয়া যাইত। প্রথম বার্ষিক শ্রেণিতেই তঁহার এম. এ ক্লাসের গণিত মোটামুটি পাঠ শেষ হইয়া গিয়াছিল। কলেজের অধ্যাপকেরা তাহার প্রতিভার পরিচয় পাইয়া বিস্মিত হইতেন। তিনি যখন স্কুলের ছাত্র, তখনই ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রথম ভাগের পাঁচিশের প্রতিজ্ঞাটি নুতন ধরণের প্রমাণ করিয়া একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। কলেজে ভরতি হইয়া সেই প্ৰবন্ধটি তিনি কেন্ত্রিজের ‘ম্যাসেঞ্জার অব ম্যাথেম্যাটিকস” পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পঠাইয়া দিলেন। ষোলো বৎসরের বালকের সেই রচনার ভিতর মনীষার এমন পরিচয় ছিল যে, অত বড় বৈজ্ঞানিক কাগজের সম্পাদক তাহা উপেক্ষা করিতে পারেন নাই। প্ৰবন্ধটি তিনি প্রকাশ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। অতিরিক্ত মস্তিষ্ক-চালনার ফলে আশুতোষ এই সময়ে আবার অসুস্থ হইয়া পড়েন। র্তাহার মাথায় এত বেশি যন্ত্রণা হইত যে, তিনি মাঝে মাঝে অজ্ঞান হইয়া পড়িতেন। পিতা চিন্তিত হইয়া এবার তঁহাকে গাজিপুরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য পাঠাইয়া দিলেন। এখানকার জলবায়ুতে র্তাহার ব্যাধি কিঞ্চিৎ কমিলা বটে, কিন্তু তিনি একেবারে সুস্থ হইয়া উঠিতে পারিলেন না। এই সময়ে একটি ঘটনা ঘটিল। আশুতোষ স্নান করিতেছিলেন,