পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় 8ዔ হঠাৎ একটি বালক নিকটস্থ ভীমরুলের চাকে ঢ়িল ছোঁড়ায় ভীমরুলগুলি উত্তেজিত হইয়া আশুতোষকে দংশন করিল। অসহ্য যন্ত্রণায় আশুতোষ মূৰ্ছিত হইয়া পড়িলেন। এ মূৰ্ছ তাহার প্রায় দেড়দিন স্থায়ী ছিল। কিন্তু এই কঠিন পীড়া তাহার জীবনে শুভ ফলদায়ক হইয়াছিল। এই ব্যাপারের পর তঁহার মাথার অসুখ সারিয়া গেল; আর তাঁহাকে মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পাইতে হয় নাই। ছয় মাস পরে সুস্থ হইয়া আশুতোষ গৃহে ফিরিলেন এবং ফিরিয়াই আবার টাইফয়েড জুরে আক্রান্ত হইলেন। এইরূপে একটি বৎসর তাহার না পড়িয়াই কাটিয়া গেল। এই সময়ে এফ-এ পরীক্ষার দিনও ঘনাইয়া আসিল। বাড়ির সকলেই তেঁহকে পরীক্ষা দিতে নিষেধ করিলেন; কিন্তু আশুতোষ সে নিষেধ মানিলেন না। সকলেই মনে করিলেন হয় তা পাশ করাই তাহার পক্ষে কঠিন হইবে। কিন্তু ফল বাহির হইলে দেখা গেল, তিনি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করিয়াছেন। আশুতোষ এই সকল পরাজয়ের গ্লানি বি. এ পরীক্ষায় সুদে-আসলে উঠাইয়া লইয়ছিলেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের বি. এ পরীক্ষায় পাঁচটি বিষয়ের ভিতর তিনটিতে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছিলেন। দর্শনে তিনি নম্বর পান একশতের ভিতর ছিয়ানক বই। তঁহার পূর্বে এত নম্বর আর কেহ পায় নাই। বি. এ পাশ করার পর আশুতোষ গণিতে এম. এ পরীক্ষা দেন। তাহার পর বৎসর অর্থাৎ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানে তিনি এম. এ ও রায়চাঁদ প্ৰেমচান্দ পরীক্ষা একসঙ্গে দিয়াছিলেন। উভয় পরীক্ষাতেই তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। গণিতে তিনি পূর্ণ নম্বর পান, বিজ্ঞানে পান একশতের ভিতর ছিয়ানব্বই। রায়চাঁদ প্ৰেমচান্দ পরীক্ষায় তিনি দশ হাজার টাকা পাইয়াছিলেন। এই সমস্ত অর্থই তিনি গ্রন্থ ক্রয়ে ব্যয় করেন। আশুতোষের লাইব্রেরি একটা দেখিবার মত জিনিষ। এই পুস্তকাগারে অনুন পাঁচ লক্ষ টাকার পুস্তক আছে। আইনের পরীক্ষাতেও আশুতোষের যশ অক্ষুঞ্জ ছিল। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রেরী প্ৰস্তাবে আশুতোষ এশিয়াটিক সোসাইটির* সদস্য হন। সমিতির পত্রিকায় গণিত সম্বন্ধে আশুতোষের যে সকল প্ৰবন্ধ বাহির হয়, তাহার দুইটি প্ৰবন্ধ কেস্ত্ৰিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য নির্বাচিত হইয়াছে। এই প্ৰবন্ধগুলির মৌলিকত্বের পরিচয় ইহা হইতেই পাওয়া যায়। ইহার পর কেন্ত্রিজের “ম্যাসেঞ্জার অব ম্যাথেম্যাটিকসের” সম্পাদক মিঃ প্লেসায়ারের চেষ্টায় আশুতোষ বিলাতের ‘রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি'র সভ্য হইয়া এফ-আর-এ-এস, এবং তাহার পর বৎসর 'এডিনবরা রয়াল সোসাইটির’র সদস্য হইয়া এফ-আর-এস-ই উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। রায়চাঁদ প্ৰেমচান্দ পরীক্ষায় পাশ করার পরের বৎসরেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম-এ পরীক্ষার পরীক্ষক নিযুক্ত হন। তঁহার পূর্বে আর কোনো বাঙালি এ সম্মান লাভ করেন। নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলি পাশ করার পর শিক্ষা-বিভাগের ডিরেক্টর স্যার আলফ্রেডু ক্রফটু আঁহাকে ডাকাইয়া আনিয়া আড়াই শত টাকা বেতনের একটি অধ্যাপকের