পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ ○ বঙ্গ-গৌরব কাহারও নাই।” তাহার এই নিভীকতার জন্যই তঁহার বন্ধুবান্ধবেরা তঁহাকে ‘বেঙ্গল টাইগার’ উপাধি দান করিয়াছিলেন। মাতার প্রতি আশুতোয্যের অসাধারণ ভক্তি ছিল। তঁহার নাম স্মরণীয় করিয়া রাখিবার জন্য তিনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ লেখকদিগকে প্রতি বৎসর একটি করিয়া স্বৰ্ণ-পদক দিবার ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন। কেবল মায়ের প্রতি নহে, মাতৃভাষার প্রতিও তাহার অনুরাগ যে কত গভীর, এই ব্যাপারটির ভিতর দিয়া তাহা স্পষ্ট ধরা পড়ে। কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার অনাদর দেখিয়া আশুতোষ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা প্রচলনের চেষ্টা করেন। এবং তঁহার সে চেষ্টা ফলবতী হইয়াছিল। আশুতোষ যে কত দীন দরিদ্র ছাত্রকে সাহায্য করিয়াছেন তাহার ইয়াত্তা নাই। ছেলেদের কাছে তঁাহার দ্বার সর্বদা মুক্ত ছিল। অত বড় বিরাট পুরুষ হইয়াও তিনি ছাত্রদিগের সহিত একেবারে আপনার জনের মতই মিশিতেন। তাহাদের অভাব অভিযোগও ছিল জয় করিয়াছিলেন। এ স্নেহ, এ ভালবাসার মধ্যে কোনোখানেই এতটুকু খাদ ছিল না। আশুতোষের মৃত্যু অত্যন্ত আকস্মিক ব্যাপার! হাইকোর্টের বিচারপতি পদ হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া তিনি আবার ওকালতি ব্যবসায় অবলম্বন করিয়াছিলেন। পাটনা হাইকোর্টে ডুমরাওঁ রাজার একটি মামলা চলিতেছিল। এই মামলায় উকিল নিযুক্ত হইয়া তিনি পাটনায় যান। পাটনা হইতে আর তিনি প্ৰত্যাবর্তন করিলেন না। সেইখানেই হঠাৎ পাকস্থলির পীড়ায্য কাতর হইয়া তাহার আত্মা দেহমুক্ত হয়। এই অদ্ভুত কমীির শোক দেশ আজিও ভুলিতে পারে নাই, কখনও যে পরিবে তাহারও সম্ভাবনা নাই। যতদিন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব থাকিবে, যতদিন স্বাধীন গবেষণার আদর থাকিবে, যতদিন একাগ্র কর্মনিষ্ঠার প্রতি দেশবাসীর শ্রদ্ধা থাকিবে, ততদিন আশুতোষের নাম বাংলার কেন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুবর্ণীক্ষরে লিখিত থাকিবে। আশুতোষের সেই Vafsi <-"Freedom first, freedom second, freedom always."- “স্বাধীনতা প্ৰথম, স্বাধীনতা দ্বিতীয়, স্বাধীনতা চিরকাল’-ভারতবাসী কোনো দিন ভুলিতে পরিবে না।